বিদ'আত--(প্রশ্নোত্তর)

 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

‘বিদআত’ কাকে বলে? কখন কোন কাজকে ‘বিদআত’ বলে আখ্যায়ন করা হবে?

বিদআত বলা হয় দ্বীন ও ইবাদতে নব আবিষ্কৃত কাজকে। অর্থাৎ দ্বীন বা ইবাদত মনে করে করা এমন কাজকে বিদআত বলা হবে, যে কাজের কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর কোন দলীল নেই। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
“তোমরা (দ্বীন) নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” ৮১ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)
“যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কিছু উদ্ভাবন করল--- যা তাঁর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” ৮২ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যাক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যপারে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।”
বলা বাহুল্য, নব আবিষ্কৃত পার্থিব কোন বিষয়কে বিদআত বলা যাবে না। যেমন শরীয়াতে নিষিদ্ধ কোন কাজকে বিদআত বলা হয় না। বরং তাকে অবৈধ, হারাম বা মাকরূহ বলা হয়।
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

‘বিদআত’ কাকে বলে? ‘বিদআতে হাসনাহ’ বলে কি কোন বিদআত আছে?

বিদআত বলা হয় দ্বীন বিষয়ক কোন নতুন কর্মকে, যার কোন দলীল শরীয়তে নেই। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ অবশ্যই তোমাদের মধ্যে যারা আমার বিদায়ের পর জীবিত থাকবে তাঁরা অনেক রকমের মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব তোমরা আমার ও আমার সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের  সুন্নাহ অবলম্বন করো, তা দাঁত দ্বারা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো। (তাতে যা পাও মান্য কর এবং অন্য কোনও মতের দিকে আকৃষ্ট হয়ো না।) আর (দ্বীনে) নবরচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান! কারণ, নিশ্চয় প্রত্যেক বিদআত (নতুন আমল) হল ভ্রষ্টতা।”(আবু দাঊদ ৪৪৪৩, তিরমিযী ২৮১৫, ইবনে নাজাহ ৪২ নং)
আর নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, “ আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে(নিয়ে যায়)।” উক্ত হাদিস থেকে এ কথাও প্রমাণ হয় যে, বিদআতে হাসানাহ (ভাল বিদআত) বলে কোন বিদআত নেই। কারণ মহানবী (সঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা।”
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

‘বিদআতে হাসনাহ’ নামক কোন বিদআত আছে কি, যা করলে সওয়াব হয়? যেহেতু হাদিসে আছে, “যে ব্যক্তি ইসলামে ভাল রীতি চালু করবে, সে তাঁর নিজের এবং সমস্ত লোকের সওয়াব পাবে, যারা তাঁর (মৃত্যুর) পর তাঁর উপর আমল করবে। তাঁদের সওয়াবের কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। ৮৪ (মুসলিম)

‘বিদআতে হাসানাহ’ (ভাল বিদআত) বলে কোন বিদআত নেই। বরং প্রত্যেক বিদআতই ‘সাইয়্যিআহ’ (মন্দ)। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” ৮৫ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)
আর হাদীসে যে ভাল রীতি চালু করার কথা বলা হয়েছে, তা নতুন কোন রীতি নয়। বরং যে রীতি শরীয়ত সম্মত কিন্তু কোন জায়গায় তা চালু ছিল না। কোন ব্যক্তি তা চালু করলে তাঁর ঐ সওয়াব হয়। পূর্ণ হাদিসটি পড়লে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, কোন শ্রেণীর রীতির কথা বলা হয়েছে।

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রঃ) বলেন, “একদা আমরা দিনের প্রথম ভাগে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকটে ছিলাম। অতঃপর তাঁর নিকট কিছু লোক এল, যাঁদের দেহ বিবস্ত্র ছিল, পশমের ডোরা কাটা চাদর (মাথা প্রবেশের মত জায়গা মাঝে কেটে) পরে ছিল অথবা ‘আবা’ (আংরাখা) পরে ছিল, তরবারি তাঁরা নিজেদের গর্দানে ঝুলিয়ে রেখেছিল। তাঁদের অধিকাংশ মুযার গোত্রের (লোক) ছিল; বরং তাঁরা সকলেই মুযার গোত্রের ছিল। তাঁদের দারিদ্রতা দেখে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। সুতরাং তিনি (বাড়ীর ভেতরে) প্রবেশ করলেন এবং পুনরায় বের হলেন। তারপর তিনি বেলালকে (আযান দেওয়ার) আদেশ করলেন। ফলে তিনি আযান দিলেন এবং ইকামত দিলেন। অতঃপর তিনি নামায পরে লোকেদেরকে (সম্বোধন করে) ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, “হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তা হতে তাঁর সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাঁদের দুজন থেকে বহু নরনারী (পৃথিবীতে) বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞা কর এবং জ্ঞাতি-বন্ধন ছিন্ন করারকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা নিসা ১ আয়াত) অতঃপর দ্বিতীয় আয়াত যেটি সূরা হাশর এর শেষে আছে সেটি পাঠ করলেন, “যে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর, আর প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামিকালের (কিয়ামতের) জন্য সে অগ্রিম কি পাঠিয়েছে। তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।” (সূরা হাশর ১৮ নং আয়াত)
“সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন নিজ দ্বীনার (স্বর্ণমুদ্রা), দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা), কাপড়, এক সা’ গম ও এক সা’ খেজুর থেকে সাদকাহ করে।” এমনকি তিনি বললেন, “খেজুরের আধা টুকরা হলেও (তা যেন দান করে।)” সুতরাং আনসারদের একটি লোক (চাঁদির) একটি থলে নিয়ে এল, লোকটির করতল যেন তা ধারণ করতে পারছিল না; বরং তা ধারণ করতে অক্ষমই ছিল। অতঃপর (তা দেখে) লোকেরা পরস্পর দান আনতে আরম্ভ করল। এমনকি খাদ্য সামগ্রী ও কাপড়ের দুটি স্তূপ দেখলাম। পরিশেষে আমি দেখলাম যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর চেহারা যেন সোনার মতো ঝলমল করছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, “যে ব্যক্তি ইসলামে ভাল রীতি চালু করবে, সে তাঁর নিজের এবং ঐ সমস্ত লোকের সওয়াব পাবে, যারা তাঁর (মৃত্যুর) পর তাঁর উপর আমল করবে। তাঁদের সওয়াব কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করবে, তাঁর উপর তাঁর নিজের এবং ঐ লোকেদের গোনাহ বর্তাবে, যারা তাঁর (মৃত্যুর) পর তাঁর উপর আমল করবে। তাঁদের গোনাহর কিছু পরিমাণও কম করা হবে না।”৮৬ (মুসলিম)
লক্ষণীয় যে, দান করা একটি ভাল রীতি। কিন্তু অনেকের মধ্যে যে প্রথম শুরু করবে, তাঁর হবে উক্ত সওয়াব। কোন নতুন রীতি আবিষ্কার করা উদ্দেশ্য নয়। হাদীসের শব্দে ঐ রীতিকে ‘সুন্নাহ’ বলা হয়েছে, যা বিদআতের বিপরীত। সুতরাং ‘বিদআতে হাসনার’ দলীল তাতে নেই।
বলা বাহুল্য, উক্ত হাদীসে নতুন রীতি চালু করার পর্যায়ভুক্ত তিন প্রকার কাজঃ-
(ক) শরিয়তসম্মত ভাল কাজ। কিন্তু অনেকের মধ্যে সর্বপ্রথম করা।
(খ) কোন সুন্নত কাজ, যা উঠে গিয়েছিল বা লোকমাঝে প্রচলিত করা অথবা জানিয়ে তাঁর প্রচলন করা।
(গ) কোন এমন কাজ করা, যা কোন শরীয়তসম্মত ভাল কাজের মাধ্যম। যেমন দ্বীনী মাদ্রাসা নির্মাণ করা, দ্বীনী বই-পত্র ছাপা ইত্যাদি।৮৭ (ইবনে উষাইমীন)
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

ঈদে মীলাদুন নাবী বিদআত কেন?

যেহেতু শরীয়তে তাঁর কোন দলীল নেই। খোদ নবী (সঃ) বা তাঁর কোন সাহাবী, কোন তাবেঈ বা ইমাম তা পালন করে যাননি, করার নির্দেশও দেননি।
সর্বপ্রথম ঈদে মীলাদ (নাবীদিবস) আবিষ্কার করেন ইরাকের ইরবিল শহরের আমীর (গভর্নর) মুযাফফারুদ্দ্বীন কূকুবুরী ঠিক হিজরী সপ্তম শতাব্দীর গোড়ার দিকে ৬০৪ (মতান্তরে ৬২৫) হিজরীতে। মিসরে সর্বপ্রথম চালু করে ফাতেমীরা; যাঁদের প্রসঙ্গে ইবনে কাসীর বলেন, “(ফাতেমী শাসকগোষ্ঠী) কাফের, ফাসেক, পাপাচার, ধর্মধ্বজী, ধর্মদ্রোহী, আল্লাহ্‌র সিফাত (গুণাবলী) অস্বীকারকারী ও ইসলাম অস্বীকারকারী মাজূসী ধর্ম-বিশ্বাসী ছিল।” ৮৮ (আল-বিদায়াহ অন-নিহায়াহ ১১/৩৪৬)
অনেকে বলেছেন, মীলাদে মোস্তফা একটি নব্য আবিষ্কার; যা আজ থেকে প্রায় বারো শত বছর পূর্বে হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষভাগে শায়খ উমার বিন মুহাম্মাদ সর্বপ্রথম প্রবর্তন করেন। মাওসেলের অধিবাসী উক্ত উমার বিন মুহাম্মাদ নাকি খুবই আশেকে রাসুল ও আল্লাহ্‌র অলী ছিলেন। তিনি রাসুল (সঃ)এর ভালবাসায় একান্ত অনুরাগের বশে এ মীলাদ তথা রাসুল (সঃ) এর জন্ম-বৃত্তান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় ব্রতী হন। বিখ্যাত সীরাতে শামী গ্রন্থে এ কথা স্বীকার করা হয়েছে। ৮৯ (দেখুনঃ ছহীহ মাকছূদে মুমেনীন ৩৬৯ পৃঃ)
তাছাড়া এতে রয়েছে বিজাতির অনুকরণ এবং শরীয়ত-বিরোধী বহু কর্মকাণ্ড। ৯০ (‘বারো মাসে তেরো পরব’ দ্রঃ)
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

‘ঈদে মীলাদুন নাবী’ (নবী দিবস) পালন করা বৈধ নয় কেন?

মহান আল্লাহ আমাদের দ্বীন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন তাঁর নবীর জীবদ্দশাতেই। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ (নেয়ামত) সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্মরূপে মনোনীত করলাম।(সূরা মায়েদাহ ৩ আয়াত)
আর মহানবী (সঃ) বলেন, “ যে ব্যক্তি আমাদের এ (দ্বীন) ব্যপারে নতুন কিছু আবিষ্কার করে, সে ব্যাক্তির সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।” ৯১ (বুখারী ও মুসলিম)  “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে, যার উপর আমাদের কোন নির্দেশ নেই, সে ব্যক্তির সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।” ৯২ (মুসলিম)

ইসলামে পালনীয় ঈদ হল মাত্র দুটি; ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। তৃতীয় কোন ঈদ ইসলামে নেই। মহানবী (সঃ) নবুয়তের ২৩ বছর কাল নিজের জীবনে কোন বছর নিজের জন্মদিন পালন করে যাননি। কোন সাহাবীকে তা পালন করার নির্দেশও দেননি। তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের জন্ম মৃত্যু উপলক্ষে কোন আনন্দ অথবা শোকপালন করে যাননি।
তাঁর পরবর্তীকালে তাঁর চারজন খলীফা তাদের খেলাফতকালে রাষ্ট্রীয়ভাবে অথবা একেকভাবে নাবীদিবস পালন করে যাননি। অন্য কোন সাহাবী বা আত্মীয়ও তাঁর প্রতি এত ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে শোক পালন করেননি। তাঁদের পরেও কোন তাবেঈ অথবা তাঁদের কোন একনিষ্ঠ অনুসারী অথবা কোন ইমাম তাঁর জন্ম কিংবা মৃত্যুদিন পালন করার ইঙ্গিত দিয়ে যাননি। সুতরাং তা যে নব আবিষ্কৃত বিদআত, তা বলাই বাহুল্য।
খ্রিস্টানরা আন্দাজে ২৫ শে ডিসেম্বর যীশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব (মীলাদ, বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে) এবং তাঁদের পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্মদিন (বার্থডে) বড় আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। মুসলিমরা তাঁদের মত আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার উদ্দেশ্য এই বিদআত ওদের নিকট হতেই গ্রহণ করে নিয়েছে। তাই এরাও ওদের মত নবীদিবস (ঈদে-মীলাদুন-নাবী) এবং পরিবারের সভ্যদের (বিশেষ করে শিশুদের) ‘হ্যাপি বার্থ ডে’র অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। অথচ তাঁদের রাসুল (সঃ) তাঁদেরকে সাবধান করে বলেন, “ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই একজন।” ৯৩ (আবুদাঊদ)
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

কেক কেটে, মোমবাতি নিভিয়ে বার্থ-ডে বা জন্মদিন পালন করা কি ঠিক?

বার্থ-ডে বা জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী পালন করা সুন্নত। তবে সেই সুন্নত [অর্থাৎ ইহুদি নাসারাদের সুন্নত মুসলিমদের নয়], যার জন্য মহানবী (সঃ) বলেছেন, “অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির সুন্নত [ইহুদি নাসারাদের] (তারিকা) অনুসরণ করবে বিঘত বিঘত এবং হাত হাত পরিমাণ (সম্পূর্ণরূপে)। এমনকি তাঁরা যদি সাণ্ডার (গোসাপ জাতীয় এক প্রকার হালাল জন্তুর) গর্তে প্রবেশ করে, তবে তোমরাও তাকে অনুসরণ করবে (এবং তাঁদের কেও যদি রাস্তার উপর প্রকাশ্যে স্ত্রী-সঙ্গম করে তবে তোমরাও তা করবে!)” সাহাবাগণ বললেন, “আল্লাহ্‌র রাসূল ইয়াহুদ ও খ্রিস্টানরা?” তিনি বললেন, “তবে আবার কারা?” ৯৪ (বুখারী, মুসলিম ও হাকেম)
বলা বাহুল্য, বিজাতীর অনুকরণে এমন উৎসব বা অনুষ্ঠান পালন করা বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেন, “ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাঁদেরই দলভুক্ত।” ৯৫ (আবূ দাঊদ, ইবা)
একই পর্যায় পড়েঃ ভালবাসা দিবস, মাতৃ দিবস ইত্যাদি।
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

তসবীহ গুনতে তাসবীহ-মালা ব্যবহার করা কি বিদআত?

অনেকে বিদআত বলেছেন। তা না হলেও তা ব্যবহার না করাই উত্তম। কারণঃ
১। মহানবী (সঃ) আঙ্গুল দ্বারা তাসবীহ করেছেন এবং বলেছেন, “আঙ্গুলগুলোকে (তাঁর দ্বারা কৃত কর্মের ব্যপারে) জিজ্ঞাসা করা হবে, কথা বলানো হবে।৯৬ (আহমাদ ৬/৩৭১, আবূ দাঊদ ১৫০১, তিরমিযী ৩৫৮৩ নং)
সুতরাং কিয়ামতে আঙ্গুলগুলো তাসবীহ পড়ার সাক্ষ্য দেবে, মালা সাক্ষ্য দেবে না।
২। মালা ব্যবহার করে তাসবীহ পড়লে সাধারনতঃ মনোযোগ ও একাগ্রতা বিচ্ছিন্ন হতে পারে। আঙ্গুল গুনলে তা হয় না।
৩। তাসবীহ-মালা ব্যবহার লোক-দেখানি বা ‘রিয়া’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রং-বেরঙের মালা ও তাঁর খটখট শব্দ মানুষের দৃষ্টি ও মন আকর্ষণ করে। আর আমলে ‘রিয়া’ ঢুকলে সওয়াবের জায়গায় শিরক ঘটে বসবে।
বলা বাহুল্য, তাসবীহ-দানার চাইতে আঙ্গুল গোনাই শরীয়তসম্মত। ৯৭ (ইবনে ঊষাইমীন)
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

মুর্দার নামে কুরআনখানি, ফাতেহাখানি, কুলখানি শরীয়তসম্মত কি?

না। বরং তা বিদআত। এ কাজে মহানবী (সঃ) এবং তা পরে তাঁর সাহাবাগণ, তাবেঈন ও সফলগণ করে যাননি। আর আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীন বিষয়ে অভিনব কিছু রচনা করবে, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” -(বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮ নং)

মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন কর্ম করে, যাতে আমাদের কোন নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।” - (মুসলিম ১৭১৮ নং)
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

ক্বারীদের কুরআন তিলাওয়াত শেষে “স্বাদাক্বাল্লাহুল আযীম” পড়া কি শরীয়তসম্মত?

না। উপর্যুক্ত কারণে তা বিদআত। ১০০ (লাজনাহ দায়েমাহ)শরীয়তে এ কাজের কোন ভিত্তি নেই। একদা মহানবী (সঃ) ইবনে মাসঊদ (রঃ) এর নিকট ক্বিরাআত শুনলেন। পরিশেষে তিনি তাকে ‘হাসবুক’ বলে থামতে বললেন। ১০১ (বুখারী ৫০৫০ নং) তখন তিনিও “স্বাদাক্বাল্লাহুল আযীম” বলেননি এবং ইবনে মাসঊদও বলেননি।১০২ (ইবনে বায)
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

তিলাওয়াত শেষে কুরআন চুম্বন করা কি বৈধ?

একই কারণে এ কাজও বিদআত। ১০৩ (লাজনাহ দায়েমাহ)


 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

মাতৃ-দিবস পালন করা কি বৈধ?

এটি আসলে অমুসলিমদের আবিষ্কৃত একটি ঈদ। সুতরাং মুসলমানদের তা পালন করা বিদআত এবং সেই সাথে কাফেরদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও অন্ধঅনুকরণও। মুসলিমদের বাৎসরিক ঈদ দুটি এবং সাপ্তাহিক ঈদ একটি। এ ছাড়া র কোন ঈদ বা পালনীয় “দিবস” নেই। বলা বাহুল্য কাফেরদের অনুকরণে অনুরূপ সকল ঈদ বর্জনীয়। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল---যা তাঁর মধ্যে নেই, তা প্রতাখ্যানযোগ্য।” ১০৪ (বুখারী ও মুসলিম)
মায়ের যে হোক আছে, তা বাৎসরিক একটি দিবসকে তাঁর নামে পালন করে, দু চারটি উপহার উপঢৌকন পেশ করে, পান ভোজনের অনুষ্ঠান করে আদায় হয়ে যায় না। মায়ের প্রতি কর্তব্য আছে প্রত্যহিক। মায়ের পদতলে আছে সন্তানের বেহেশত। মায়ের কথার অবাধ্য হয়ে মাতৃ দিবস পালন করে পার্থিব আনুষ্ঠানিক আনন্দোপভোগ ছাড়া আর কী হতে পারে? ১০৫(ইবনে ঊষাইমীন)
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে সোমবার দিন রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, “ ওটি এমন একটি দিন, যেদিন আমার জন্ম হয়েছে।”(মুসলিম)এ হাদিস থেকে কি প্রমাণ হয় না যে, মহানবী (সঃ) নিজের জন্মদিন পালন করতেন?

এ হাদিস থেকে জন্মদিন পালন করার কথা প্রমাণিত হয় না। যদি হয়েও থাকে, তাহলে প্রত্যেক সোমবারকে তাঁর জন্মদিন হিসেবে পালন করতে হবে এবং কেবল রোযা রাখার মাধ্যমে। নচেৎ তা কামার-পুকুরের দলীল দেখিয়ে কুমোর-পুকুর দখল করার মত ব্যপার হবে।
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

তসবীহ গুনতে “তসবীহ-দানা” বা “তসবীহ-মালা” ব্যবহার করা বিদআত?

“তসবীহ-দানা” ব্যবহারকে বিদআত বলা হয় না। যেহেতু তা ইবাদতের একটু আসীলা। আর ইবাদাতের আসীলাকে বিদআত বলা হয় না। তবে তা সুন্নাহ পরিপন্থী। যেহেতু মহানবী (সঃ) ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা তসবীহ গুনেছেন। সুতরাং “তসবীহ-মালা” ব্যবহার না করাই উত্তম। এর আরও দুটি কারণ আছে। একঃ এতে তাসবীহকারী উদাস হয়ে থাকে। যেহেতু গোনা মালাতো গাঁথাই আছে। তাই খেয়াল থাকে না গণনায় এবং খেয়াল থাকেনা তাসবীহতে। দুইঃ এতে “রিয়া” বা লোকপ্রদর্শনের সম্ভবনা আছে অনেক। যেহেতু তাসবিহ-মালা দেখে লোকে তাঁর প্রশংসাই করবে। ১০৬( ইবা, ইউ)
অনেকে বলবেন, “ আঙ্গুল দ্বারা গণনার সংখ্যায় ভুল হতে পারে। মালা দ্বারা নির্ভুল গননা সম্ভব।” আমরা বলি, “গণনায় ভুল হলে সমস্যা কি? নিয়ত যখন ঠিক থাকে, তখন সওয়াবতো কমে যাবে না। বিশেষ করে আঙ্গুল যখন কিয়ামতে কথা বলে তসবীহকারীর জন্য সাক্ষ্য দেবে, ১০৭(আহমাদ ৬/৩৭১, আবূ দাঊদ ১৫০১, তিরমিযী ৩৫৮৩ নং)তখন তাতেই ফযীলত বেশী নয় কি?
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

কুরআন তিলাওয়াত শেষে “স্বাদাক্বাল্লাহুল আযীম” বলা কি বিধেয়?

কুরআন তিলওয়াত শেষে “স্বাদাক্বাল্লাহুল আযীম” বলা বিধেয় নয়, বরং বিদআত। যেহেতু এ কাজ মহানবী (সঃ) তাঁর কোন সাহাবী অথবা তাঁদের পরবর্তী কোন ইমাম করে যাননি। অথচ তিনি ছিলেন অধিক অধিক কুরআন তিলাওয়াতকারী। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রঃ) বলেন, “একদা রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বললেন, “(হে ইবনে মাসঊদ!) আমাকে কুরআন পড়ে শুনাও।” আমি বললাম, “হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আমি আপনাকে পড়ে শোনাব, অথচ আপনার উপরেই তা অবতীর্ণ করা হয়েছে?” তিনি বললেন, “অপরের মুখ থেকে (কুরআন পড়া) শুনতে আমি ভালবাসি।” সুতরাং তাঁর সামনে আমি সূরা নিসা পড়তে লাগলাম, পড়তে পড়তে যখন আমি এই (৪১ নং) আয়াতে পৌছলাম---যার অর্থ, “তখন তাঁদের কি অবস্থা হবে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকেও তাঁদের সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব?” তখন তিনি বললেন, “যথেষ্ট , এখন থাম।” অতঃপর আমি তাঁর দিকে ফিরে দেখি, তাঁর নয়ন যুগল অশ্রু ঝরাচ্ছে।১০৮ (বুখারী, মুসলিম) কই? এখানে তিনি “স্বাদাক্বাল্লাহুল আযীম” বলেননি।
মহান আল্লাহ বলেছেন, বল, “স্বাদাক্বাল্লাহ”। (আলে ইমরানঃ ৯৫) কিন্তু তিনি বলেননি যে,  কুরআন পড়া শেষ হলে “স্বাদাক্বাল্লাহ” বল। বলা বাহুল্য, কোন আম নির্দেশকে বিশেষ কাজের জন্য খাস করা শরয়ী নীতি নয়।১০৯ (ইবা, লাদা)
 বিদআত---আবদুল হামীদ ফাইযী

কলোম্বোর এক মসজিদের ডান দিকে নবী (সঃ) এর কবরের ছবি টাঙ্গানো আছে। তাঁর সামনে মুসল্লীরা দাঁড়িয়ে নাবী (সঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করে। এ কাজ কি শরীয়তসম্মত?

মসজিদের ভিতরে নবী (সঃ)এর কবরের (বা সবুজ গুম্ভজের) ছবি রাখা একটি আপত্তিকর বিদআত। পরন্ত তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে দরুদ পাঠ করা অন্য একটি আপত্তিকর বিদআত। এটি অতিরঞ্জনবশতঃ কৃত আচরণ। আর নবী (সঃ) বলেছেন, “তোমরা দ্বীনের ব্যপারে অতিরঞ্জন করা থেকে দূরে থেকো। কেননা অতিরঞ্জনই পূর্ববর্তী বহু উম্মতকে ধ্বংস করেছে।”১১০ (আহমাদ ১/২১৫, ৩৪৭, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ৩০২৯ নং)  
তিনি আরও বলেছেন,
“তোমরা আমাকে নিয়ে (আমার তা’যীমে) বাড়াবাড়ি করে না, যেমন খ্রিস্টানরা (ঈসা) ইবনে মারয়্যামকে নিয়ে করেছে। আমি তো আল্লাহ দাস মাত্র। অতএব তোমরা আমাকে আল্লাহ্‌র দাস ও তাঁর রাসূলই বলো” ১১১ (বুখারী  ৩৪৪৫, মুসলিম, মিশকাত ৪৮৯ নং)
দরূদ যে কোন (পবিত্র) জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে-বসে পড়া যায়। মহানবী (সঃ) এর কবরের ছবি সামনে রেখে দাঁড়িয়ে দরূদ পড়া বিদআত। এক সাথে জামাআতী দরূদ পড়া বিদআত।
তাছাড়া মসজিদের দেওয়ালে নবী-আলীর ছবি অঙ্কন করা অথবা টাঙ্গানো মসজিদে তাঁদেরকে দাফন করার বিধানের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু তা মানুষকে শিরকের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ঐ ছবির সামনে দরূদ পড়তে পড়তে নবী (সঃ) এর কাছে প্রার্থনাও শুরু হয়ে যায়। সুতরাং এমন কাজ তওবার সাথে বর্জনীয়। ১১২ (লাজনাহ দায়েমাহ)