উযূতে তরতীব ওয়াজেব কি?
অনেকের মতে উযূতে তরতীব ওয়াজেব। যেহেতু মহান আল্লাহ উযূর আয়াতে তরতীব বজায় রেখে মাথা মাসাহর পরে পা ধোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ ধোয়ার কথা মাসাহর পূর্বে আছে এবং তারই ইরাবে “আরজুলাকুম”-এ জবর হয়েছে। কিন্তু হাদীসে এসেছে,
“আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) এর কাছে উযূর পানি আনা হল। তিনি উযূ করতে নিজের হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর নিজ মুখ তিনবার ধুলেন। অতঃপর কুল্লি করলেন ও নাকে পানি নিলেন তিনবার এবং মাথা মাসাহ করলেন। দুই কানের উপর ও ভিতরের অংশ মাসাহ করলেন। আর পা দুটিকে তিনবার করে ধুলেন। ১১৩ (আহমাদ, আবূ দাঊদ)
বোঝা গেল, নবী (সঃ) কখনো কখনো কুল্লি করা ও নাকে পানি দেওয়ার আগে মুখণ্ডহাত ধুয়েছেন। ওয়াজেব হলে তা করতেন না। তবে অধিকাংশ বর্ণনায় যে তরতীব এসেছে, তাঁর ভিত্তিতে তা সুন্নত বলা যায়। ১১৪ (আলবানী)
“আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) এর কাছে উযূর পানি আনা হল। তিনি উযূ করতে নিজের হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর নিজ মুখ তিনবার ধুলেন। অতঃপর কুল্লি করলেন ও নাকে পানি নিলেন তিনবার এবং মাথা মাসাহ করলেন। দুই কানের উপর ও ভিতরের অংশ মাসাহ করলেন। আর পা দুটিকে তিনবার করে ধুলেন। ১১৩ (আহমাদ, আবূ দাঊদ)
বোঝা গেল, নবী (সঃ) কখনো কখনো কুল্লি করা ও নাকে পানি দেওয়ার আগে মুখণ্ডহাত ধুয়েছেন। ওয়াজেব হলে তা করতেন না। তবে অধিকাংশ বর্ণনায় যে তরতীব এসেছে, তাঁর ভিত্তিতে তা সুন্নত বলা যায়। ১১৪ (আলবানী)
অপবিত্র অবস্থায় কি কুরআন পড়া জায়েয?
অপবিত্রতা দুই শ্রেণীরঃ ছোট অপবিত্রতা, যাতে উযূ জরুরী হয় এবং বড় অপবিত্রতা, যাতে গোসল জরুরী হয়। ছোট অপবিত্র অবস্থায় থাকলে কুরআন স্পর্শ না করে মুখস্থ পড়া জায়েয। আর বড় অপবিত্র অবস্থায় কুরআন পড়া জায়েয নয়। অবশ্য এ অবস্থায় কুরআনী আয়াতের যিকর যেমন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিঊন” ইত্যাদি পড়া যায়। ১১৫ (ইবনে ঊষাইমীন)
হযরত আলী (রঃ) বলেন, “বড় নাপাকির অবস্থা ছাড়া অন্যান্য অবস্থায় আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন।” ১১৬ (আহমাদ ৬২৭, তিরমিযী ১৩১ নং, আলবাণীর নিকট হাদীসটি যয়ীফ)
হযরত আলী (রঃ) বলেন, “বড় নাপাকির অবস্থা ছাড়া অন্যান্য অবস্থায় আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন।” ১১৬ (আহমাদ ৬২৭, তিরমিযী ১৩১ নং, আলবাণীর নিকট হাদীসটি যয়ীফ)
অপবিত্র অবস্থায় জুযদানে রাখা কুরআন স্পর্শ করা বৈধ?
হ্যাঁ, কুরআন জুযদান, বক্স, ব্যাগ বা অন্য কোন মোড়কের ভিতরে থাকলে অপবিত্র অবস্থায় তা স্পর্শ করা বৈধ। (সাফা)
অপবিত্র বা মাসিক অবস্থায় কুরআনের ক্যাসেট স্পর্শ করা কি বৈধ?
অপবিত্র বা মাসিক অবস্থায় কুরআনের ক্যাসেট স্পর্শ করা বৈধ, টেপ লাগানো ইত্যাদি বৈধ। যেহেতু তা মুসফাক নয়। ১১৭ (লাজনাহ দায়েমাহ)
উযূ করার পর স্বামীর চুম্বনের ফলে কি কারো উযূ ভেঙ্গে যায়?
না, কেবল স্ত্রীদের চুম্বন ও স্পর্শ করার ফলে স্বামীর উযূ ভাঙ্গে না, স্ত্রীরও না। মহানবী (সঃ) স্ত্রী চুম্বন করে নামায এবং (তাঁর আগে) উযূ করতেন না। ১১৮ (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসাঈ, সঃ জামে’ ৪৯৯৭ নং)
অবশ্য সেই চুম্বন বা স্পর্শের ফলে প্রস্রাব-দ্বার হতে “মাযী” (পাতলা আঠালো পদার্থ) বের হলে উযূ ভেঙ্গে যাবে।
অবশ্য সেই চুম্বন বা স্পর্শের ফলে প্রস্রাব-দ্বার হতে “মাযী” (পাতলা আঠালো পদার্থ) বের হলে উযূ ভেঙ্গে যাবে।
ঋতুরোধক ঔষধ ব্যবহার করে মাসিক ঋতু বন্ধ রেখে যথাসময়ে রোযা বা হজ্জ করা কি মহিলাদের জন্য বৈধ?
বৈধ, যদি তাতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্যগত ক্ষতি না থাকে তবে। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। ১১৯ (লাজনাহে দায়েমাহ)
যে সেন্টে স্পিরিট আছে, তা ব্যবহার করা বৈধ কি?
যে সেন্টে স্পিরিট বা এ্যালকোহল আছে, তা ব্যবহার করার ব্যাপারে উলামাগণের মতভেদ আছে। পূর্বসতর্কতামুলকভাবে তা ব্যবহার না করাই উত্তম, বিশেষ করে নামাযের আগে। ১২০ (ইবনে বায)
পানি ছাড়া অন্য কোন তরল পদার্থ দ্বারা অপবিত্র জিনিসকে পবিত্র করা যায় কি?
কোন অপবিত্র জিনিসকে পবিত্র করতে হলে পবিত্র পানি জরুরী। অন্য কোন তরল পদার্থ দ্বারা পবিত্রতা লাভ হয় না।২২১ (আলবানী)
অপবিত্রতা এক দিরাহাম পরিমাণ হলে তা মার্জনীয়। এ কথা কি ঠিক?
এ কথা ঠিক নয়। এ ব্যপারে বর্ণিত হাদিসটি জাল। সুতরাং অপবিত্রতা এক দিরহাম থেকে কম হলেও তা দূর করতে হবে। নচেৎ তাতে নামায শুদ্ধ হবে না। ১২২ (আলবানী)
মানুষের বমি কি অপবিত্র?
এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক মতে তা অপবিত্র নয়। ১২৩ (আলবানী)
অমুসলিম এমন অনেক খাদ্য ভক্ষন করে, যা ইসলামে হারাম। সুতরাং তাঁদের পাত্র ব্যবহার করা কি বৈধ?
অমুসলিমদের পাত্রে তাঁদের (দোকানে এ হোটেলে) খাওয়া বৈধ নয়। তবে তাঁদের পাত্র (দোকানে বা হোটেলে) ছাড়া যদি মুসলিমদের কোন পাত্র (দোকান বা হোটেলে) না পাওয়া যায়, তাহলে নিরুপায় অবস্থায় তাঁদের সেই পাত্র (ধোয়ার পর তাঁদের দোকান বা হোটেলে)খাওয়ার অনুমতি আছে। ১২৪ (বুখারী, মুসলিম ১৯৩০ নং প্রমুখ)
একদা এক সাহাবী রাসুলুল্লাহ(সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, “ আমরা আহলে কিতাবদের পাশাপাশি বাস করি। আর তাঁরা তাঁদের পাত্রে শূকর রান্না করে এবং মোদ পান করে।(এখন আমরা কি তাঁদের পাত্রে পানাহার করতে পারি?) উত্তরে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বললেন, “ যদি তোমরা তা ছাড়া অন্য পাত্র পাও, তাহলে তাতেই পানাহার কর। আর যদি তা ছাড়া অন্য পাত্র না পাও, তাহলে তা ধুয়ে নাও এবং তাতে পানাহার কর।” ১২৪ (আবূ দাঊদ ৩৮৩৯ নং)
একদা এক সাহাবী রাসুলুল্লাহ(সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, “ আমরা আহলে কিতাবদের পাশাপাশি বাস করি। আর তাঁরা তাঁদের পাত্রে শূকর রান্না করে এবং মোদ পান করে।(এখন আমরা কি তাঁদের পাত্রে পানাহার করতে পারি?) উত্তরে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বললেন, “ যদি তোমরা তা ছাড়া অন্য পাত্র পাও, তাহলে তাতেই পানাহার কর। আর যদি তা ছাড়া অন্য পাত্র না পাও, তাহলে তা ধুয়ে নাও এবং তাতে পানাহার কর।” ১২৪ (আবূ দাঊদ ৩৮৩৯ নং)
বাথরুমে প্রবেশ করার পূর্বে “বিসমিল্লাহ” কি সশব্দে পড়তে হবে?
হাদীসে এসেছে, প্রস্রাবাগার বা পায়খানা ঘরে বা স্থানে প্রবেশ হওয়ার পূর্বে “বিসমিল্লাহ” পড়লে আল্লাহ্র হুকুমে জ্বিনদের চোখে পর্দা পড়ে যায়। ১২৬(তিরমিযী ৬০৬, ইবনে মাজাহ ২৯৭ নং)কিন্তু সশব্দে বলার নির্দেশ নেই। সুতরাং নিঃশব্দেই বলা বিধেয়। ১২৭(আলবানী)
বাথরুমের ভিতরে ক্বিবলামুখী হয়ে প্রস্রাব-পায়খানা করা বৈধ?
সঠিক মতে বৈধ নয়। রুমের ভিতরে যদি ক্বিবলার দিকে থুথু ফেলা নিষিদ্ধ হয়, তাহলে ক্বিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে করে প্রস্রাব-পায়খানা অধিকরূপে নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। ১২৮ (আলবানী)
শৌচকর্মের সময় ঢিলা ও পানি উভয়ই ব্যবহার করা বিধেয়?
এ ব্যপারে কোন সহীহ দলীল নেই। সুতরাং পানির পূর্বে ঢিল ব্যবহার করাটা অতিরঞ্জনের পর্যায়ভুক্ত। যেহেতু মহানবী (সঃ) এর কর্ম হল, দুটির মধ্যে একটি ব্যবহার করা। আর তাঁর আদর্শই হল, সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ। ১২৯ (আলবানী)
দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা কি বৈধ?
প্রস্রাবের ছিটা লাগার ভয় না থাকলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা বৈধ। এর বৈধতা ও অবৈধতার বিষয়ে উভয় প্রকার দলীল রয়েছে। ১৩০ (আলবানী)
আবূ হুরাইরা (রঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছি যে, “নিশ্চয় আমরা উম্মতকে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় ডাকা হবে, যে সময় তাঁদের উযূর অঙ্গগুলো চমকাতে থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে তাঁর চমক বাড়াতে চায়, সে যেন তা করে।” (অর্থাৎ সে যেন তাঁর উযূর সীমার অতিরিক্ত অংশও ধুয়ে ফেলে।) ১৩১(বুখারী, মুসলিম) উলামাগণ বলেছেন, “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে তাঁর চমক বাড়াতে চায়, সে যেন তা করে।”---এই বাক্যটি নবী (সঃ) এর নয়, বরং তা আবূ হুরাইরার। আর আবূ হুরাইরা নিজেও উযূতে হাত ধোয়ার সময় বগল পর্যন্ত ধুতেন। অতঃএব আমাদের কি তা করা বৈধ?
অনেকের মতে তা বৈধ। যেহেতু হাদীসের বক্তব্য থেকে আবূ হুরাইরা তাই বুঝেছিলেন এবং সাহাবাদের বুঝে আমাদের হাদীস বুঝা দরকার। কিন্তু সঠিক এই যে, তা কেবল আবূ হুরাইরা বুঝ। যেহেতু “গুরাহ” বলে চেহারার ঔজ্জ্বল্যকে। আর তা বৃদ্ধি করার উপায় নেই। সুতরাং কুরআনে নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত (অর্থাৎ, কনুই ও গাঁট) পর্যন্ত ধোয়াই বিধেয়। ১৩২ (আলবানী)
যৌন উত্তেজনার সময় পানির মতো আঠালো যে তরল পদার্থ বের হয়, তা কি নাপাক?
একে “মাযী” বলে। আর তা নাপাক। তা বের হলে উযূ নষ্ট হয়ে যায়। শরমগাহ ধুতে হয় এবং কাপড়ে লাগলে পরিষ্কার করতে হবে। অবশ্য খুলে না ধুলেও চলে। কেবল এক লোটা পানি নিয়ে তাঁর উপর ছিটিয়ে দিলেই হয়। ১৩৩ (আবূ দাঊদ ২১০, তিরমিযী ১১৫, ইবনে মাজাহ ৫০৬নং)যেহেতু তা এমন তা এমন এক অপবিত্র পদার্থ, যা থেকে বাঁচা অনেক দুষ্কর। তাই তাঁর ব্যাপারে পবিত্রতার এই হালকা বিধান।
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খুন দেখা গেলে, তা হায়েয, নাকি ইস্তিহাযা?
সঠিক মতে তা হায়েয বা মাসিকের খুন। যদি মহিলার পূর্বেকার অভ্যাস অনুযায়ী তা এসে থাকে। যেহেতু কিতাব ও সুন্নাহতে এমন দলীল নেই, যাতে বুঝা যায় যে, গর্ভকালের খুন মাসিক নয়। ১৩৪ (ইবনে উষাইমীন)
------------------------------------------------------------
সমাপ্ত