যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

 যাকাত >আবদুল হামীদ ফাইযী

দাওয়াতের কাজের জন্য, ইসলামী বই-পুস্তক ছেপে বা ক্যাসেট-সিডি তৈরি করে বিতরণের জন্য কি যাকাতের অর্থ ব্যবহার করা যায়?

ইসলামের দাওয়াতের কাজে যাকাতের অর্থ ব্যবহার করা যায়। যেহেতু তা আমভাবে যাকাতের একটি খাত ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। ২২০

  যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

পেশাদার ভিক্ষুকদেরকে কি যাকাতের মাল দেওয়া যাবে?

যদি জানা যায় যে, যাঞাকারী একটি পেশাদার ভিক্ষুক, সে যাকাতের হকদার নয় এবং ভিক্ষা করা তাঁর বৈধও নয়, তাহলে তাকে ভিক্ষাও দেবেন না। ২২১
বিদায়ী হজ্জের সময়ে আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) সাদকাহ বিতরণ করছিলেন। এমন সময় দুটি লোক এসে তাঁর কাছে যাঞা করল। তিনি লোক দুটির দিকে নজর তুলে পুনরায় নামিয়ে নিলেন। দেখলেন, তাঁরা উভয়ে কর্মক্ষম লোক। অতঃপর তিনি বললেন, “তোমরা যদি চাও, তাহলে আমি দিতে পারি। কিন্তু এ মালে কোন ধনী ও উপার্জনশীল কর্মঠ লোকের কোন অংশে নেই।” ২২২


 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

একজন লোককে গরীব ভেবে যাকাতের অর্থ দিলাম। সেও হয়তো হাদিয়া ভেবে হাত পেতে নিয়ে নিল। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারলাম, সে ধনী ব্যক্তি। এখন আমার যাকাত কি কবুল হবে?

কোন লোককে যাকাতের হকদার ভেবে যাকাত দেওয়ার পর যদি মনে হয় যে, সে আসলে যাকাতের হকদার নয়, তাহলে অজানার কারণে তা কবুল হয়ে যাবে। একদা (বনী ইসরাঈলের) এক ব্যক্তি এক রাতে অজান্তে এক চোরকে সাদকাহ করল। সকালে সে জানতে পারল যে সে চোর ছিল। কিন্তু তাতে সে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করল। তারপরের রাতে আবার অজান্তে এক বেশ্যাকে সাদকাহ করল। সকাল বেলায় তা সে জানতে পেরে তাঁর জন্যও আলহামদুলিল্লাহ্‌ পড়ল। তৃতীয় রাতেও অজান্তে এক ধনীর হাতে সাদকাহ দিল। সকালে তা জানতে পেরে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করল। অতঃপর (নবী অথবা স্বপ্নযোগে) তাকে বলা হল যে, তোমার সাদকাহ কবুল হয়ে গেছে। আর সম্ভবতঃ তোমার ঐ দান নিয়ে চোর চুরি করা থেকে বিরত হবে, বেশ্যা বেশ্যাবৃত্তি হতে তাওবাহ করবে এবং ধনী উপদেশ গ্রহণ করবে করে দান করতে শিখবে। ২২৩

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

কাউকে যাকাত দেওয়ার সময় সে যাকাতের হকদার কি না, তা জিজ্ঞাসা করা জরুরী কি?

দেওয়ার সময় সে যাকাতের হকদার কিনা জিজ্ঞাসা করা জরুরী নয়? তাতে মুসলিমের বেইজ্জত হয়। যদি আপনি আপনার প্রবল ধারণায় মনে করেন যে, অমুক যাকাতের হকদার, তাহলে তাকে দিয়ে ফেলুন। হাত পাতা ফকীর না হলেও সে মিসকীন হতে পারে। অতএব আপনার সাদকাহ আদায় ও কবুল হয়ে যাবে--ইনশাআল্লাহ।

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

কাউকে যাকাত দেওয়ার সময় তাকে জানিয়ে দেওয়া জরুরী কি?

যাকে যাকাতের মাল দিয়ে সাহায্য করা হবে, তাকে এ কথা জানানো জরুরী নয় যে, তা যাকাতের মাল। আপনি তাকে হকদার বুঝলে, তাকে দিন। সে যা মনে করে গ্রহণ করবে, করুক।

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

কোন শ্রেণীর ঋণগ্রস্থকে যাকাতের মাল দিয়ে সাহায্য করতে পারা যায়?

যে ব্যক্তি কোন বিধেয় বা বৈধ কাজ করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়, তাকেই যাকাত দিয়ে সাহায্য করা যাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অবৈধ কাজ করতে গিয়ে; যেমন মদ খেতে অভ্যাসী হয়ে, বেশ্যাগমনে অথবা জুয়া খেলায় সর্বস্ব হারিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়, তাকে যাকাত দিয়ে সাহায্য করা যাবে না। ২২৪

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

কাউকে ঋণ দেওয়ার পর সে যাকাতের হকদার হলে, যাকাতের নিয়তে ঋণ মউকুফ করে দেওয়া বৈধ কি?

কাউকে ঋণ দেওয়ার পর সে যাকাতের হকদার হলে, যাকাতের নিয়তে ঋণ মউকুব করে দেওয়া বৈধ কি না---এ বিষয়ে উলামাদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেছেন, নিজের টাকা বাঁচানোর উদ্দেশ্যে এমন করা বৈধও নয়। কিন্তু অন্যান্য অনেকে বলেছেন, যে, যদি সত্যিই সে যাকাতের হকদার হয়, তাহলে তাঁর ঋণ মওকুব করে, যাকাত থেকে শোধ করা হলে, তাকে এ কথা জানিয়ে দিলে এমন কাজ বৈধ। আর আল্লাহ্‌ই অধিক জানেন। ২২৫

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

আমি একজন প্রবাসী। আমার যাকাত কি আমার স্বদেশের মানুষদেরকে দিতে পারব?

যাকাত স্থানীয় হকদারকে দেওয়াই উত্তম। তবে সেখানে যদি হকদার না থাকে অথবা অন্য জায়গায় হকদার বেশি হকদার হয়, তাহলে সেখানে দেওয়া যায়। তাতে কোন বাধা নেই। ২২৬ (ইবনে উষাইমীন, ইবনে জিবরীন)

  যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

আমার মা পৃথক থাকে। আমি কি আমার মা-কে যাকাত দিতে পারি?

মা-কে যাকাত দেওয়া বৈধ নয়। মায়ের ভরণপোষণ করা তো ছেলের জন্য ওয়াজেব। আর তা হবে তাঁর পকেট থেকে। অনুরূপ বাপ, স্ত্রী ও ছেলেকে যাকাত দেওয়া যাবে না। ২২৭ (ইবনে বায)

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

আমার স্বামী বিদেশে পড়াশুনা করে। কিন্তু তাঁর অর্থের বড় অভাব। আমি কি আমার মালের যাকাত তাকে দিতে পারি?

স্ত্রী তাঁর স্বামীকে প্রয়োজনে যাকাত দিতে পারে। যেহেতু স্বামীর ভরণপোষণ করা স্ত্রীর উপর ওয়াজেব নয়।

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

বেনামাযীকে যাকাত দেওয়া বৈধ কি?

বেনামাযীকে যাকাত দেওয়া বৈধ নয়। তবে তাকে নামাযের দিকে আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে যাকাত দেওয়া যায়।

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

কোন মিসকিন আমার নিকট চাকরি করলে আমি তাকে আমার যাকাত দিতে পারি কি না?

তাঁর অভাব বলে তাকে দেওয়া যাবে। তবে সেই দেওয়াকে আপনার উদ্দেশ্য যেন তাকে আপনার কাজে উদ্বুদ্ধ করা না হয়, কাজে তাঁর আন্তরিকতা পাওয়া না হয়, তাঁর কাজের বোনাস স্বরূপ না হয়, তা তাঁর প্রাপ্য হক থেকে কেটে না নেওয়া হয়। ২২৮ (ইবনে জিবরীন)

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

ঋণে দেওয়া টাকা বা অন্য কাজে পড়ে থাকা টাকার যাকাত দিতে হবে কি?

নিসাব পরিমাণ টাকা কাউকে ঋণ দেওয়া থাকলে, কিছুর ভাড়া আদায় বাকি থাকলে, মালের মূল্য বকেয়া থাকলে, দেনমোহর বাকি থাকলে আদায় হওয়া মাত্র সেই বছরের যাকাত আদায় দিতে হবে। এর পূর্বের বছরগুলো যাকাত লাগবে না। বলা বাহুল্য, যদি কোন এমন ব্যক্তি বা সংস্থাকে ঋণ দেওয়া থাকে, যার নিকট চাওয়া মাত্র পরিশোধ পাওয়া যাবে না, তাহলে এমন ঋণে দেওয়া টাকার যাকাত আদায় করা ফরয নয়। অবশ্য পরিশোধ পেলেই সেই বছরের যাকাত (বছর পূর্ণ না হলেও) আদায় করতে হবে।
তদানুরুপ হারিয়ে যাওয়া অথবা চুরি হয়ে যাওয়া মাল ফিরে পেলে ঐভাবেই যাকাত আদায় করতে হবে। যেমন পেনশনের টাকা এক সাথে নিসাব পরিমাণ পেলে তাঁর (১ বছরের) যাকাত সাথে সাথে আদায় করতে হবে। ২২৯ (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১৮/১৭৫)

  যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

ঋণে নেওয়া টাকার যাকাত আদায় করতে হবে কি?

ঋণে নেওয়া টাকা যদি যাকাতের নিসাব পরিমাণ হয় অথবা তা মিলিয়ে নিসাব পূর্ণ হয় এবং তা ব্যবসা ইত্যাদিতে থেকে বছর পূর্ণ হয়, তাহলে ঋণগ্রহীতাকে তাঁর যাকাত আদায় করতে হবে।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি যাকাতের নিসাব পরিমাণ অর্থ থাকে এবং ঋণ পরিশোধ করার পরও নিসাব বহাল থাকে, তাহলে তাকে যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। অন্যথা ঋণ পরিশোধ করার পর যদি নিসাব বহাল না থাকে, তাহলে তাঁর উপর যাকাত ফরয নয়।
জ্ঞাতব্য যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জমির ওশর অথবা পশুর যাকাত ফরয হলেও অনুরূপ তাঁর উচিৎ আগে ঋণ পরিশোধ করা। অতঃপর নিসাব পরিমাণ থাকলে তাঁর ওশর বা যাকাত আদায় করা।

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

ব্যাংকে ডিপোজিট ও জমা রাখা টাকার যাকাত দিতে হবে কি?

ব্যাংকে জমা রাখা টাকা আমানত; তা যে কোন সময় তোলা যায়। অতএব তা নিসাব পরিমাণ হলে এবং বছর ঘুরলে ঋণদাতাকে সে টাকার বাৎসরিক যাকাত আদায় করতে হবে। তদনুরূপ কোন ব্যক্তি বিশেষের কাছে রাখা আমানতের টাকা; যা চাইবা মাত্র পাওয়া যাবে তারও যাকাত বাৎসরিক আদায় করা ফরয।
প্রকাশ থাকে যে, ব্যাংকের সূদ হারাম। অতএব সে সূদে যাকাতও নেই।

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

শিশু, এতীম ও পাগলের মালেও যাকাত ফরয কি?

যাকাত ফরয হয় মালে। তাই তা ফরয হওয়ার জন্য মালিকের জ্ঞ্যানসম্পন্ন ও সাবালক হওয়া শর্ত নয়। বলা বাহুল্য শিশু, এতীম ও পাগলের মালেও যাকাত ফরয। তাঁদের তরফ থেকে তাঁদের অভিভাবক (অলী বা অসী) হিসাব করে আদায় করবে। এতে বাহ্য দৃষ্টিতে মাল কমতে থাকলেও বাস্তবে তাঁদের মালে বরকত বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া অভিভাবকের উচিৎ, তাঁদের মাল ব্যবসায় বিনিয়োগ করা।২৩০ (আল-মুমতে ৬/২৬-২৭)

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

খয়রাতি ফাণ্ডের টাকার যাকাত আছে কি?

সাদকাহ, যাকাত, দান বা ওআকফ প্রভৃতি খয়রাতি ফাণ্ডের (মসজিদ বা মাদ্রাসার) মাল (বা শস্য)নিসাব পরিমাণ হলেও তাতে যাকাত নেই। কারণ সে মাল আল্লাহ্‌র। আর তা আল্লাহ্‌র পথেই ব্যয় হবে।২৩১ (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ৮/১৫০, ১৬১, ২৫/৪৪, ৩০/১১৯)

কারখানা ও প্রেসের মালিক কিসের যাকাত দেবে?

কারখানা ও প্রেসের যন্ত্রপাতির কোন যাকাত নেই। যাকাত আছে নিসাব পরিমাণ টাকা পয়সা ও বিক্রেয় পন্য সামগ্রীর।  ২৩২ (লাজনাহ দায়েমাহ)

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

এক ব্যক্তি বহু কষ্ট করে ২/৩ বছর থেকে টাকা জমিয়েছে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। সে টাকারও কি যাকাত আছে?

নিসাব পরিমাণ হলে সে টাকারও প্রত্যেক বছর যাকাত আদায় করতে হবে। ২৩৩(ইবনে বায)

 যাকাত >>আবদুল হামীদ ফাইযী

ভাড়ায় দেওয়ার জন্য একাধিক গাড়ি আছে। তাতে কি যাকাত আছে?

তাতে যাকাত নেই। ভাড়ার টাকাসহ অন্য টাকা নিসাব পরিমাণ পৌছলে ফি-বছর তাতে যাকাত আছে। ২৩৪(লাজনাহ দায়েমাহ)
                           page-     1       2