যৌবন জীবন page 1

            46টি প্রশ্ন উত্তর

যৌন জীবন---  আবদুল হামীদ ফাইযী.    

রুমে কেবল স্বামী স্ত্রী থাকলে শরীরে কোন কাপড় না রেখে কি ঘুমানো যায়?

লজ্জাস্থান অপ্রয়োজনে খুলে রাখা বৈধ নয়। পর্দার ভেতরে প্রয়োজনে তা খুলে রাখায় দোষ নেই। যেমন মিলনের সময়, গোসলের সময় বা প্রস্রাব পায়খানার করার সময়। অপ্রয়োজনের সময় লজ্জাস্থান আবৃত রাখা ওয়াজেব। নাবি (সঃ) বলেছেন, “তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর।” সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসুল! লোকেরা আপসে এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, “যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়।” সাহাবী বললেন, ‘ হে আল্লহর রাসুল! কেউ যদি নির্জনে থাকে?’ তিনি বললেন, “মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ এর বেশী হকদার যে, তাকে লজ্জা করা হবে।” ৬১৪ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৩১১৭ নং)
এখানে “তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর”---এর মানে এই নয় যে, স্ত্রী ও ক্রীতদাসীর কাছে সর্বদা নগ্ন থাকা যাবে। উদ্দেশ্য হল, তাদের মিলনের সময় অথবা অন্য প্রয়োজনে লজ্জাস্থান খোলা যাবে, অপ্রয়োজনে নয়।
তাছাড়া উলঙ্গ অবস্থায় ঘুমালে আকস্মিক বিপদের সময় বড় সমস্যায় পড়তে হবে। সুতরাং সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়।
 যৌন জীবন---  আবদুল হামীদ ফাইযী

স্বামী স্ত্রী একে অপরের গোপন অঙ্গ দেখতে পারবে কি?

শরীয়তে তাতে কোন বাধা নেই। স্বামী স্ত্রী উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ নগ্নবস্থায় দেখতে পারে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৭৬৬) এতে স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতিও নেই। ‘স্বামী স্ত্রীর একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখতে নেই, বা হযরত আয়েশা (রঃ) কখনও স্বামীর গুপ্তাঙ্গ দেখেননি, উলঙ্গ হয়ে গাধার মত সহবাস করো না, বা উলঙ্গ হয়ে সহবাস করলে সন্তান অন্ধ হবে। সঙ্গমের সময় কথা বললে সন্তান তোৎলা বা বোবা হয়’ ইত্যাদি বলে যে সব হাদীস বর্ণনা করা হয়, তার একটিও সহীহ ও শুদ্ধ নয়।  (দেখুন, তুহফাতুল আরুশ ১১৮ – ১১৯ পৃঃ)
 যৌন জীবন---  আবদুল হামীদ ফাইযী

শুনেছি, সহবাসের সময় সম্পূর্ণ উলঙ্গ হতে নেই, রুম অন্ধকার রাখতে হয়, একে অপরের লজ্জাস্থান দেখতে নেই ইত্যাদি। তা কি ঠিক?

এ হল লজ্জাশীলতার পরিচয়। পরন্ত শরীয়তে তা হারাম নয়। অর্থাৎ রুম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে এবং সেখানে স্বামী স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ না থাকলে আর পর্দার প্রয়োজন নেই। স্বামী স্ত্রী একে অন্যের লেবাস। উভয়ে উভয়ের সব কিছু দেখতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“(সফল মুমিন তারা) যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতিত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারা হবে সীমালংঘনকারী। (মু’মিনূনঃ ৫-৬, মাআরিজঃ ২৯-৩১)”
নবী (সঃ) বলেছেন, “তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকটে লজ্জাস্থানের হেফাযত কর।” সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসুল! লোকেরা আপসে এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, “যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়।” সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কেউ যদি নির্জনে থাকে।’ তিনি বললেন, “মানুষ অপেক্ষা আল্লহ এর বেশী হকদার যে, তাকে লজ্জা করা হবে।” ৬১৭ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৩১১৭ নং)
সুতরাং রুম অন্ধকার না করলে এবং উভয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হলে কোন দোষ নেই। (ইবনে উষাইমীন)
 যৌন জীবন---  আবদুল হামীদ ফাইযী

কোন কোন সময় স্ত্রী সহবাস নিসিদ্ধ? শুনেছি অমবশ্যা ও পূর্ণিমার রাত্রিতে সহবাস করতে হয় না। এ কথা কি ঠিক?

দিবারাত্রে স্বামী স্ত্রীর যখন সুযোগ হয়, তখনই সহবাস বৈধ। তবে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কয়েকটি নিষিদ্ধ সময় আছে, যাতে স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ নয়।
১। স্ত্রীর মাসিক অথবা প্রসবোত্তর খুন থাকা অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বল, তা অশুচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রাবকালে স্ত্রীসঙ্গ বর্জন কর এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য) তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)
আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি তার ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন গনকের নিকট উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।” (অর্থাৎ কুরআনকে সে অবিশ্বাস ও অমান্য করে। কারণ, কুরআনে এ সব কুকর্মকে নিসিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।)  (আহমাদ ২/৪০৮, ৪৭৬, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)
২। রমযানের দিনের বেলায় রোযা অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।” (বাকারাহঃ ১৮৭)
আর বিদিত যে, রমযানের রোযা অবস্থায় সঙ্গম করলে যথারীতি তার কাফফারা আছে। একটানা দুইমাস রোযা রাখতে হবে, নচেৎ অক্ষম হলে ষাট জন মিসকীন খাওয়াতে হবে।
৩। হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেন, “সুবিদিত মাসে (যথাঃ শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জ এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ না করে।” (বাকারাহঃ ১৯৭)
এ ছাড়া অন্য সময়ে দিবারাত্রির যে কোন অংশে সহবাস বৈধ।  (মুহাম্মাদ স্বালেহ আল-মুনাজ্জিদ)
 যৌন জীবন---  আবদুল হামীদ ফাইযী

হাদিসে এসেছে, “যদি তোমরা কেউ স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছা করে, তখন দুআ পড়ে, তাহলে তাঁদের ভাগ্যে সন্তান এলে, শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারে না।” (বুখারী-মুসলিম) বাহ্যতঃ এ নির্দেশ স্বামীকে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হল, স্ত্রীর জন্যও কি দুআ পড়া বিধেয়?

আসলে সহবাসের দুআ স্বামীর জন্যই বিধেয়। স্ত্রী পড়লেও দোষ নেই। যেহেতু এক কাজ উভয়ের, সে কাজের নির্দেশ পুরুষকে দেওয়া হলেও মহিলাও শামিল হয়।  (লাজনাহ দায়েমাহ)
 যৌন জীবন--- জীবন  আবদুল হামীদ ফাইযী

সহবাসের আগে দুআ পড়লে শয়তান ক্ষতি করতে পারে না। ক্ষতি করতে না পারার অর্থ কি?

এর অর্থ এই যে,
(ক) ‘বিসমিল্লাহ’র বরকতে সেই সন্তান নেক হয়। যেহেতু মহান আল্লাহ শয়তান কে বলেছেন, “আমার (একনিষ্ঠ) বান্দাদের উপর তোমার কোন আধিপত্য থাকবে না।” (হিজরঃ ৪২)
(খ) সন্তানের স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতি হয় না।
(গ) সন্তান শিরক ও কুফুরমুক্ত হয়।
(ঘ) কাবীরা গোনাহ থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হয়।
(ঙ) ঐ সহবাসে শয়তান শরীক হতে পারেনা।
 যৌন জীবন---  আবদুল হামীদ ফাইযী

আমি বিবাহিত। আমার সন্তান হয় না। টিউবের মাধ্যমে সন্তান নেব ইচ্ছা করেছি। আমি চাই আমার সন্তানকে যেন শয়তান ক্ষতিগ্রস্ত না করে। কিন্তু তার জন্য পাঠিতব্য দুআটি কখন পড়ব?

যখন টিউবে রাখার জন্য বীর্য দেবেন, বীর্যপাতের আগে প্রস্তুতির সময় দুআটি পড়ে নেবেন।
 যৌন জীবন---  আবদুল হামীদ ফাইযী

স্ত্রী গর্ভবতী থাকা অবস্থায়ও কি সহবাসের সময় দু’আ পড়তে হবে?

সহবাসের সময় দু’আ পড়ায় দুটি লাভ আছে। শয়তানের শরীক হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা এবং তার ক্ষতি থেকে ঐ মিলনে সৃষ্ট সন্তানকে রক্ষা করা। সুতরাং যখন আমরা জানি যে, সন্তান আগের মিলনে এসে গেছে, অথবা সন্তান হবে না, অথবা সন্তান চাই না, তখনও যদি আমরা দু'আ পড়ি, তাহলে তাতে আমরা নিজেদেরকে আমাদের যৌনআনন্দে শয়তানের শরীক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারব। বলা বাহুল্য, সহবাসের দু'আ সর্বাবস্থায় পঠনীয়। যেহেতু হাদিসের নির্দেশ ব্যাপক।  (ইবনে বায)
 যৌন জীবন--- আবদুল হামীদ ফাইযী

সহবাসের সময় হাঁচি হলে নির্দিষ্ট যিকির পড়া যাবে কি?

এই সময় মুখে যিকির পড়া যাবে না। মনে মনে পড়লে দোষ নেই। পেশাব পায়খানা করা অবস্থায় নবী (সঃ) সালামের জবাব দেননি।  (মুসলিম ৩৭০ নং)
 যৌন জীবন---  আবদুল হামীদ ফাইযী

শরীয়তে সমমৈথুন প্রসঙ্গে বিধান কি?

সমমৈথুনঃ পুরুষ সঙ্গম বা পুরুষ-পুরুষে পায়ুপথে কুকর্ম করাকে বলে। আর এরই অনুরূপ স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করাও। এটা সেই কুকর্ম, যা লুত (আঃ) এর সম্প্রদায় করেছিল। যেমন মহান আলাহ বলেন,
“ মানুষের মধ্যে তোমরা তো কেবল পুরুষদের সাথেই উপগত হও। ” (সূরা শূআরা ১৬৫ আয়াত)
তিনি আরও বলেন, “তোমরা তো কাম তৃপ্তির জন্য নারী ত্যাগ করে পুরুষদের নিকট গমন কর!” (সূরা আ’রাফ ৮১ আয়াত)
আল্লাহ তাঁদেরকে এই কুকাজের শাস্তি স্বরূপ তাঁদের ঘর বাড়ী উল্টে দিয়েছিলেন এবং আকাশ থেকে তাঁদের উপর বর্ষণ করেছিলেন পাথর। তিনি বলেন,
“(অতঃপর যখন আমার আদেশ এলো) তখন আমি (তাঁদের নগরগুলোকে) ঊর্ধ্বভাগকে নিম্নভাগে পরিণত করেছিলাম এবং আমি তাঁদের উপর ক্রমগত কঙ্কর বর্ষণ করেছিলাম।” (সূরা হিজর ৭৪ আয়াত)
সুতরাং উক্ত সম্প্রদায়ের মতো কুকর্মে যে লিপ্ত হবে সেও উপর্যুক্ত শাস্তির উপযুক্ত। তাই এমন দুরাচার প্রসঙ্গে কিছু সাহাবা (রাঃ) এর ফতোয়া হল, তাকে জ্বালিয়ে মারা হবে। কেউ কেউ বলেন, উঁচু জায়গা থেকে ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হবে। ৬২৬ (ইবনে জিবরীন)
এ বিষয়ে একাধিক হাদীসেও নবী (সঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে; এক হাদীসে তিনি বলেছেন, “যাকে লুত সম্প্রদায়ের মত কুকর্মে লিপ্ত পাবে, তাকে এবং যার সাথে এ কাজ করা হচ্ছে, তাঁকেও তোমরা হত্যা করে ফেল।” (তিরমিজী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৩৫৭৫ নং)

-------
 যৌন জীবন---   আবদুল হামীদ ফাইযী

গুপ্ত অভ্যাস (হস্তমৈথুন) ব্যবহার করা বৈধও কি?

গুপ্ত অভ্যাস (হাত বা অন্য কিছুর মাধ্যমে বীর্যপাত, স্বমৈথুন বা হস্ত মৈথুন) করা কিতাব, সুন্নাহ ও সুস্থ বিবেকের নির্দেশ মতে হারাম।
কিতাব বা কুরআনের দলীল; আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে নিজেদের পত্নি অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে অন্যথা করলে তারা নিন্দনীয় হবে না। আর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।” (সূরা মু’মিনূন ৫-৭)
সুতরাং যে ব্যক্তি তার স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী (অধিকারভুক্ত দাসী বলতে ক্রীতদাসী ও কাফের যুদ্ধবন্দিনীকে বুঝানো হয়েছে। এখানে কাজের মেয়ে, দাসী, খাদেম বা চাকরানী উদ্দেশ্য নয়।) ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা কামলালসা চরিতার্থ করতে চায়, সে ব্যক্তি “এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে।” বলা বাহুল্য, এই আয়াতের পরিপেক্ষিতে সে সীমালঙ্ঘঙ্কারী বলে বিবেচিত হবে।
সুন্নাহ থেকে দলীল, আল্লাহ্‌র নবী (সঃ) বলেন, “হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে কেউ স্ত্রী সঙ্গম ও বিবাহ খরচে সমর্থ, সে যেন বিবাহ করে! কারণ টা অধিক দৃষ্টি-সংযতকারী এবং অধিক যৌনাঙ্গ রক্ষাকারী, যেহেতু তা এর জন্য (খাসী করার মত) কাম দমন কারীর সমান।”  (বুখারী, মুসলিম)
সুতরাং নবী (সঃ) বিবাহে অসমর্থ ব্যক্তিকে রোযা রাখতে আদেশ করলেন, অথচ যদি হস্তমৈথুন বৈধ হত, তবে নিশ্চয় তিনি তা করতে নির্দেশ দিতেন। অতএব তা সহজ হওয়া স্বত্বেও যখন তিনি তা করতে নির্দেশ দিলেন না, তখন জানা গেল যে তা বৈধ নয়।
আর সুচিন্তিত মত এই যে, যেহেতু এই কাজে বহুমুখী ক্ষতি ও অনিষ্টের আশঙ্কা রয়েছে, যা চিকিৎসাবিদগণ উল্লেখ করে থাকেন; এতে এমন ক্ষতি রয়েছে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে বড় বিপদ বিপজ্জনক; এ কাজ যৌনশক্তিকে দুর্বল করে ফেলে, চিন্তাশক্তি ও দূরদর্শিতার ক্ষতি সাধন করে এবং কখনো বা এর অভ্যাসী ব্যক্তিকে প্রকৃত দাম্পত্যসুখ থেকে বঞ্চিত করে। কারণ যে কেউ এ ধরনের অভ্যাসে নিজ কাম-লালসাকে চরিতার্থ করে থাকে, সে হয়তো বা বিবাহের প্রতি ভ্রূক্ষেপই করবে না।  (ইবনে উষাইমীন)
 যৌন জীবন---   আবদুল হামীদ ফাইযী

লিঙ্গ স্পর্শ না করে স্ত্রী সহবাসের কথা কল্পনা করে বীর্যপাত করা কি বৈধ?

না এ কাজ বৈধ নয়। কারণ তা ব্যাভিচারের দিকে আকর্ষণ করতে পারে। যুবকের উচিৎ বিবাহের আগে অথবা স্ত্রীর নিকটবর্তী হওয়ার আগ পর্যন্ত সুচিন্তা করা। কুচিন্তা এসে গেলে ইচ্ছাকৃতভাবে কল্পনা বিহার না করা। ৬৩১ (লাজনাহ দায়েমাহ)
 যৌন জীবন---  আবদুল হামীদ ফাইযী

স্ত্রীর যোনিপথ সংকীর্ণ হলে স্বামী তার পায়খানারদ্বারে সঙ্গম করতে পারে কি?

স্ত্রীর যোনিপথ সংকীর্ণ ও সঙ্গমের অযোগ্য হলে স্বামী তার পায়খানারদ্বারে সঙ্গম করতে পারে না। যেমন সঙ্গমযোগ্য যোনি না থাকলে সেই স্ত্রীকে স্বামী তালাক দিতে পারে। যেহেতু পায়ুপথ সঙ্গমস্থল নয়। তা হলে তাকে তালাক দেওয়া বৈধ হতো না। ৬৩২ (আযওয়াউল বায়ান ১/৯৪ দ্রঃ)
 যৌন জীবন---   আবদুল হামীদ ফাইযী

মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে ধারনা করে স্ত্রী সহবাসের পর পুনরায় খুন দেখা গেলে গোনাহ হবে কি? অতঃপর করণীয় কি?

প্রবল ধারণায় যখন বুঝা যাবে যে, মহিলা পবিত্র হয়ে গেছে, তখন তাকে গোসল করে নামায রোযা করতে হবে। কিন্তু নামায রোযা শুরু করবার পর অথবা স্বামী সঙ্গমের পর যদি পুনরায় খুন দেখে তাহলে গোনাহ হবে না। যেহেতু খুন থাকা অবস্থায় মাসিক জেনে সঙ্গম করলে গোনাহ হবে। অবশ্য যদি সেই খুন অভ্যাসগত প্রিয়ডের ভিতরে হয়, তাহলে তা মাসিকের খুন।

সুতরাং অতঃপর পুনরায় নামায রোযা ও সঙ্গমাদি বন্ধ করতে হবে। পক্ষান্তরে তা যদি প্রিয়ডের বাইরে হয়, তাহলে তা মাসিকের খুন নয়, তাকে “ইস্তিহাযা”র খুন বলে। তাতে কোন দোষ হবে না। তবে মহিলার উচিৎ, অভ্যাসগত প্রিয়ড শেষ না হওয়া পর্যন্ত খুন বন্ধ দেখে স্বামী সহবাসে তড়িঘড়ি না করা। উচিৎ হল, সাদা স্রাব বের হতে শুরু না হওয়া পর্যন্ত অথবা পরিপূর্ণরূপে খুন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অথবা প্রিয়ডের গনা দিন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। নচেৎ স্ত্রী জেনেশুনে বাঁধা না দিলে তার গোনাহ হবে।  (মুহাম্মাদ স্বালেহ আল-মুনাজ্জিদ)
 যৌন জীবন---   আবদুল হামীদ ফাইযী

প্রসবোত্তর স্রাব অথবা ঋতুস্রাব থাকাকালীন সময়ে মিলন হারাম। কিন্তু সেই অবস্থায় স্বামী নিজের কাম বাসনা চরিতার্থ করতে কি করতে পারে?

মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)
কিন্তু নিকটবর্তী হয়ো না’র অর্থ হল সঙ্গমের জন্য তাঁদের কাছে যেও না। অর্থাৎ যোনিপথে সঙ্গম হারাম। পায়খানারদ্বারেও সঙ্গম হারাম। আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বলেন,
“আল্লাহ আযযা অজাল্ল (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষের মলদ্বারে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে।” (তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, সহিহুল জামে ৭৮০১ নং)
তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি কোন ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন গনকের কাছে উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।” (অর্থাৎ কুরআনকেই সে অবিশ্বাস অ অমান্য করে। কারণ, কুরআনে এক সব কুকর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।)  (আহমাদ ২/৪০৮, ৪৭৬, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)
তাহলে যৌন ক্ষুধা মিটাতে এ সময় করা যায় কি? এর উত্তর দিয়েছেন মহানবী (সঃ)। তিনি বলেছেন, “সঙ্গম ছাড়া সব কিছু কর।” (মুসলিম ৩০২ নং)
তা বলে কি মুখণ্ডমৈথুন করা যাবে? না, কারণ যে মুখে আল্লাহ্‌র যিকির হয়, সে মুখকে এমন কাজে ব্যবহার রুচিবিরুদ্ধ কাজ। অবশ্য উরু-মৈথুন করা যায়। তবে সতর্কতার সাথে, যাতে প্রস্রাব বা পায়খানারদ্বারে সঙ্গম হয়ে বসে। যদিও মা আয়েশা (রঃ) বলেছেন, “নবী (সঃ) মাসিকের সময় আমাদের যৌনাঙ্গে কাপড় রাখতে বলতেন। অতঃপর শয্যাসঙ্গী হতেন। তবে তিনি ছিলেন জিতেন্দ্রিয়।” (বুখারি, মুসলিম) তবুও কাপড় না রেখে যদি ঊরু মৈথুন করে, তবে তা হারাম নয়।  (ইবনে বায)
 যৌন জীবন---   আবদুল হামীদ ফাইযী

নিয়মিত মাসিক হওয়ার পরও অনেক সময় খুন দেখা যায়, সে সময় কি সহবাস বৈধ?

নিয়মিত মাসিকের পরে অথবা প্রসবের চল্লিশদিন পরেও যে অতিরিক্ত খুন দেখা যায়, তাতে সহবাস বৈধ এবং নামায রোযা ওয়াজেব। একে ইস্তিহাযার খুন বলে। এ খুন হায়যের মতো নয়।
 যৌন জীবন---   আবদুল হামীদ ফাইযী

মাসিক অবস্থায় স্বামী আমার দেহ নিয়ে খেলায় মাতলে আমার কি করা উচিত?

মাসিক অবস্থায় স্বামী নিজ স্ত্রীর দেহ নিয়ে খেলায় মাতলে এবং তার ফলে স্ত্রীরও উত্তেজনা সৃষ্টি হলে প্রশ্রাব পায়খানার দ্বার সাবধানে হেফাজত করবে। নচেৎ সঙ্গম ঘটে গেলে সেও গোনাহগার হবে।
 যৌন জীবন---   আবদুল হামীদ ফাইযী

শুনেছি মাসিক অবস্থায় সহবাস করলে এক দীনার (সওয়া চার গ্রাম পরিমাণ স্বর্ণ অথবা তার মূল্য, না পারলে এর অর্ধ পরিমাণ অর্থ) সদকাহ করে কাফফারা দিতে হবে। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২২ পৃঃ) কিন্তু স্ত্রী যদি সেই সময় মিলনে এমনভাবে উত্তেজিত করে, যাতে স্বামী তা দমন করতে না পেরে মিলন করে ফেলে, তাহলে কাফফারা কাকে দিতে হবে?

কাফফারা দিতে হবে স্ত্রীকে। আর স্বামীকেও দিতে হবে। যেহেতু সে ইচ্ছা করলে নাও করতে পারত। পক্ষান্তরে স্বামী জোড় পূর্বক করলে এবং স্ত্রী বাঁধা দিতে না পারলে তার গোনাহ হবে না এবং তাকে কাফফারা দিতে হবে না।
 যৌন জীবন---   আবদুল হামীদ ফাইযী

মাসিক অবস্থায় সঙ্গম হারাম। কিন্তু স্ত্রীর দেহের অন্যান্য জায়গায় বীর্যপাত করা যায় কি না?

উত্তম হল স্ত্রীকে জাঙ্গিয়া পরিয়ে দেহের যে কোন জায়গায় বীর্যপাত করা। অবশ্য যে নিজের মনোবলে সঙ্গম থেকে বাঁচতে পারবে, তার জাঙ্গিয়া না পরালেও চলবে। পরন্ত স্ত্রীর মুখে বীর্যপাত করা বিকৃত রুচির মানুষের ঘৃণ্য আচরণ। আর পায়খানার দ্বারে সঙ্গম হারাম এবং এক প্রকার কুফরি।
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)
আর মহানবী (সঃ) বলেছেন, “সঙ্গম ছাড়া সব কিছু কর।”
তবে সতর্কতার বিষয় যে, নিষিদ্ধ জায়গার আশেপাশে থাকতে থাকতে যেন উত্তেজনার চরম মুহূর্তে সেই জায়গায় প্রবেশ না হয়। আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বলেছেন, “পাপ আল্লাহ্‌র সংরক্ষিত চারণভূমি। যে ঐ চারণভূমির ধারে পাশে চরবে, সে অদুরে সম্ভবতঃ তার ভিতরেও চরতে শুরু করে দেবে।”  (বুখারি, মুসলিম)
 যৌন জীবন---   আবদুল হামীদ ফাইযী

হস্ত মৈথুন যুবক যুবতী কারোর জন্যও বৈধ নয়। কিন্তু যদি স্বামী স্ত্রী একে অপরের হস্ত দ্বারা মৈথুন করে, তাহলেও কি তা অবৈধ হবে?

স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রে এমন মৈথুন অবৈধ নয়। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “(সফল মু’মিন তারা,) যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নি অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারা হবে সীমালঙ্ঘকারী।” (মু’মিনূনঃ ৫-৭, মাআরিজঃ ২৯-৩১)
সুতরাং অবৈধ হল নিজের হাতে নিজের বীর্যপাত। স্বামী স্ত্রীর একে অন্যের হাত দ্বারা বীর্যপাত অবৈধ নয়।
আর মহানবী (সঃ) ঋতুমতী স্ত্রীর সাথে যৌনাচার করার ব্যপারে বলেছেন, “সঙ্গম ছাড়া সব কিছু কর।” (মুসলিম ৩০২ নং)
           
                                        আরো দেখুন.... next page(2)