সালাত বা নামাজ ---প্রশ্ন উত্তর (page1)

  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

কাজের চাপে সময় পার করে নামায পিছিয়ে দেয়া কি বৈধ?

নিজের কাজ বা সৃষ্টির কাজ আগে করা এবং স্রষ্টার কাজ পিছিয়ে দেয়া বৈধ হতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় নামাযকে বিশ্বাসীদের জন্য নির্ধারিত সময়ে অবশ্য কর্তব্য করা হয়েছে। (নিসাঃ ১০৩)
যুদ্ধ চলাকালেও নামায পিছিয়ে না দিয়ে “সালাতুল খাওফ” পড়ার নির্দেশ আছে। সুতরাং কাজের ফাঁকেই নামায আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা রাখা জরুরী। কাজের কাপড় নোংরা হলেও পৃথক কাপড় রেখে নামায পড়তে হবে। মাঠে-ময়দানে ভিজে জায়গায় দাঁড়িয়েও নামায পরে নিতে হবে। একান্ত কেউ নিরুপায় হলে সে কথা ভিন্ন। যেমন রোগী ও মুসাফির জমা তাকদীম বা তা’খির করতে পারে। বৃষ্টির জন্যও জমা তাকদীম হতে পারে।
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

আমার রাত্রে শুতে দেরি হয়। ডিউটি শুরু হয় সকাল সাতটা থেকে। ফজর হয় চারটায়। ফজরের সময় উঠে জামায়াতে নামায পড়লে এবং তারপর শুলে আর ঘুম হয় না। সুতরাং আমি যদি ডিউটি শুরুর এক ঘণ্টা আগে এলার্ম লাগিয়ে শুই এবং ডিউটিতে যাবার আগে ফজরের নামাযটা পরে নেই, তাহলে কি যথেষ্ট হবে না?

না, সময় পার করে নামায পড়া যথেষ্ট নয়। ইচ্ছাকৃত সময় পার করে নামায পড়লে তা নষ্ট করারই শামিল। বহু উলামার মতে এমন ব্যক্তি ‘কাফের’ হয়ে যাবে। ১৪২
 যে নামাযীরা সময় পার করে নামায পড়ে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের ‘গাই’ উপত্যকা। মহান আল্লাহ বলেন, “তাদের পর এল অপদার্থ পরবর্তীগণ তাঁরা নামায নষ্ট করলে ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হল; সুতরাং তাঁরা অচিরেই ‘গাই’ প্রত্যক্ষ করবে।” (মারয়্যামঃ ৫৯)
নামায বিনষ্ট করার অর্থেঃ একেবারে নামায না পড়া; যা মূলতঃ কুফরী, অথবা নামাযের সময় বিনষ্ট করা; যার অর্থ সঠিক সময়ে নামায আদায় না করা, যখন ইচ্ছা পড়া বা বিনা ওযরে দুই বা ততোধিক নামাযকে একত্রে পড়া, অথবা কখনো দুই, কখনো চার, কখনো এক, কখনো পাঁচ অক্তের নামায পড়া। এ সমস্ত নামায বিনষ্ট করার অর্থে শামিল।
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

নামাযে শৈথিল্য বা ঢিলেমি করা অথবা নামাযকে ভারী মনে করা কাদের কাজ?

নামাযে শৈথিল্য বা ঢিলেমি করা অথবা নামাযকে ভারী মনে করা মুনাফিকদের কাজ। মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়। বস্তুতঃ তিনিও তাঁদেরকে প্রতারিত করে থাকেন এবং যখন তাঁরা নামাযে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে নিছক লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তাঁরা অল্পই স্মরণ করে থাকে।” (নিসাঃ ১৪২)
“আর তাদের দান খয়রাত গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কারণ এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে কুফরী করেছে, আর তাঁরা নামাযে শৈথিল্যের সাথেই উপস্থিত হয় এবং তাঁরা অনিচ্ছাকৃতভাবেই দান করে থাকে।” (তাওবাহঃ ৫৪)
আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বলেন, “মুনাফিকদের পক্ষে সবচেয়ে ভারী নামায হল এশা ও ফজরের নামায। ঐ দুই নামাযের কি মাহাত্ন্য আছে, তা যদি তাঁরা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও অবশ্যই তাতে উপস্থিত হত। আমার ইচ্ছা ছিল যে, কাউকে নামাযের ইকামত দিতে আদেশ দিই, অতঃপর একজনকে নামায পড়তেও হুকুম করি, অতঃপর এমন একদল লোক সঙ্গে করে নিই; যাঁদের সাথে থাকবে কাঠের বোঝা। তাদের নিয়ে এমন সম্প্রদায়ের নিকট যাই, যারা নামাযে হাজির হয় না। অতঃপর তাদেরকে ঘরে রেখেই তাদের ঘরবাড়িকে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিই।” ১৪৩
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

দেখেছি, অনেক লোক নামাযে সালাম ফিরার পর তাদের ডানে বামের লোকেদের সাথে মুসাফাহাহ করে। এটা কি সুন্নত?

না, বরং এ কাজ বিদআত। তবে যদি তা মুসাফাহাহ প্রথম সাক্ষাতের জন্য সালাম-সহ হয়, তাহলে তা সুন্নত। অর্থাৎ, নামায শুরু হওয়ার পর পাশে দাঁড়ানোর সময় সালাম-মুসাফাহাহ সুযোগ না হওয়ার ফলে নামায শেষ হওয়ার পরে তা করলে দূষণীয় নয়। ১৪৪
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

জামাআত শেষে অনেক সময় মসজিদে সুন্নত পড়ি। এমন সময় কোন লোক আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার ইক্তিদা করতে থাকে। এটা কি বৈধ? বৈধ হলে আমার কি করা উচিত?

জামায়াতের সওয়াব নেওয়ার উদ্দেশ্যে তা বৈধ। তখন আপনার উচিৎ ইমামতি নিয়ত করে তাকবীরাদি সশব্দে পড়া। আপনি সুন্নত পড়ছেন এবং সে নিশ্চয় ফরয পড়ছে। আপনাদের এই নিয়তের ভিন্নতা নামাযের কোন ক্ষতি করবে না। সাহাবী মুআয বিন জাবাল (রঃ) আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) এর সাথে নামায পড়তেন, তারপর নিজের গোত্রে ফিরে গিয়ে তাদের ইমামতি করে ঐ নামাযই পড়তেন। ১৪৫ তাঁর প্রথম নামায ফরয হতো এবং শেষেরটা নফল।
একদা তিনি সালাম ফিরে দেখলেন, মসজিদের এক প্রান্তে দুই ব্যক্তি জামাআতে নামায পড়েনি। কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘আমরা আমাদের বাসায় নামায পড়ে নিয়েছি।’ তিনি বললেন, “এমনটি আর করো না। বরং যখন তোমাদের কেউ নিজ বাসায় নামায পড়ে নেয়, অতঃপর (মসজিদে এসে) দেখে যে, ইমাম নামায পড়েনি, তখন সে যেন (দ্বিতীয়বার) তাঁর সাথে নামায পড়ে। আর এ নামায তাঁর জন্য নফল হবে।” ১৪৬
মহানবী (সঃ) একদা এক ব্যক্তিকে একাকী নামায পড়তে দেখলে তিনি অন্যান্য সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এমন কেউ কি নেই, যে এর সাথে নামায পড়ে একে (জামাআতের সওয়াব)দান করবে?” এ কথা শুনে এক ব্যক্তি উঠে তাঁর সাথে নামায পড়ল। ১৪৭  অথচ সে মহানবী (সঃ) এর সাথে ঐ নামায পূর্বে পড়েছিল। সুতরাং ইমামের ছিল ফরয এবং মুক্তাদীর নফল।
এ থেকে আরো বুঝা যায় যে, জামাআত শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় জামাআত কায়েম করা দোসাবহ নয়।
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

কোন ব্যক্তি মসজিদে এসে যদি দেখে যে, ইমাম শেষ তাশাহহুদে আছেন, তাহলে সে কি জামাআতে শামিল হবে, নাকি শামিল না হয়ে পরবর্তী জামাআতের অপেক্ষা করবে?

যদি সে নিশ্চিতভাবে জানে যে, পরবর্তী জামাআতের জন্য লোক আছে, তাহলে সে শেষ বৈঠকে শামিল না হয়ে অপেক্ষা করবে এবং জামাআতের সাথে নামায পড়বে। যেহেতু সঠিক মতে পূর্ণ এক রাকআত না পেলে জামাআত পাওয়া যায় না। কিন্তু যদি কোন লোক আসার আশা না থাকে, তাহলে উত্তম জামাআতে শামিল হয়ে নামায আদায় করা; যদিও তা শেষ বৈঠক। কারণ জামাআত সহকারে নামাযের কিছু অংশ পাওয়া, মোটেই কিছু না পাওয়া থেকে উত্তম। অতঃপর সে যদি জামাআতের শেষ বৈঠকে শামিল হওয়ার পর শুনতে পায় যে, দ্বিতীয় জামাআত খাড়া হয়েছে, তাহলে সে ঐ নামায (সালাম না ফিরে) বাতিল করে তাদের সাথে জামাআত সহকারে নামায আদায় করতে পারে। অথবা দু’রাকাআত হয়ে থাকলে তা নফলের নিয়ত করে সালাম ফিরে নামায শেষ করে ঐ জামাআতে শামিল হতে পারে। পরন্ত সে একাকী নামায শেষ করলেও তাতে কোন দোষ নেই। সে এই তিনটির মধ্যে একটিকে এখতিয়ার করতে পারে। ১৪৮
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

প্লেনে কীভাবে নামায পড়া যাবে?

যেভাবে সম্ভব, সেভাবেই পড়ে নিতে হবে। কিবলা মুখে দাঁড়িয়ে, রুকু সিজদা যথা নিয়মে করা সম্ভব হলে, তা করতে হবে। নচেৎ বসে ইশারায় রুকু সিজদা করে নামায আদায় করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করে চল।” (তাগাবুনঃ ১৬)
তিনি ইমারান বিন হুসাইন (রঃ) কে বলেছিলেন, “তুমি দাঁড়িয়ে নামায পড়। না পারলে বসে পড়। তাও না পারলে পার্শ্বদেশে শুয়ে পড়।” ১৪৯
উত্তম হল প্রথম অক্তে নামায পড়ে নেওয়া। অবশ্য গন্তব্যস্থলে মাটিতে নেমে শেষে অক্তে নামায আদায় করার আশা থাকলে তাও করতে পারে। অনুরূপ মোটরগাড়ি, ট্রেন ও পানিজাহাজে নামাযের সময় হলে একই নিয়ম। ১৫০
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

যে মসজিদে কবর আছে, সে মসজিদে নামায শুদ্ধ কি?

যে মসজিদে কবর আছে, সে মসজিদে নামায শুদ্ধ নয়, চাহে সে কবর নামাযীদের পিছনে বা সামনে, ডানে বা বামে হোক। যেহেতু নবী (সঃ) বলেছেন,  “ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের উপর আল্লাহ্‌র অভিশাপ, কারণ তাঁরা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।” ১৫১
তিনি আরো বলেছেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী ও নেক লোকেদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিত। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়ো না। এরূপ করতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছি।” ১৫২
আর যেহেতু কবরের ধারে পাশে নামায পড়া শিরকের অন্যতম অসীলা এবং তাতে থাকে কবরস্থ ব্যক্তিকে নিয়ে অতিরঞ্জন, সেহেতু উক্ত হাদীসদ্বয় এবং অনুরূপ আরো অন্যান্য হাদীসের উপর আমল করে শিরকের ছিদ্রপথ বন্ধ করার লক্ষ্যে কবরযুক্ত মসজিদে নামায নিষিদ্ধ হওয়া আবশ্যক। ১৫৩
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

অনেক নামাযী ঘরে নামায পড়ে, মসজিদে আসে না। তাদের ব্যাপারে বিধান কী?

তাদের জন্য বৈধ নয় ঘরে নামায পড়া। বরং তাদের জন্য ওয়াজেব হল, মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাআত সহকারে নামায আদায় করা। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আযান শোনা সত্ত্বেও মসজিদে জামাআতে এসে নামায আদায় করে না, কোন ওজর না থাকলে সে ব্যক্তির নামায কবুল হয় না।” ১৫৪

একটি অন্ধ লোক নবী (সঃ)এর নিকট এসে নিবেদন করল, “হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আমার কোন পরিচালক নেই, যে আমাকে মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে।” সুতরাং সে নিজে বাড়িতে নামায পড়ার জন্য আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) এর নিকট অনুমতি চাইল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। কিন্তু যখন সে পিঠ ঘুরিয়ে রওনা দিল, তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন, “তুমি কি আহবান (আযান)শুনতে পাও?” সে বলল, ‘জি হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “ তাহলে তুমি সাড়া দাও।” (অর্থাৎ মসজিদেই এসে নামায পড়।) ১৫৫

রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন আছে। আমার ইচ্ছা হচ্ছে যে, জ্বালানী কাঠ জমা করার আদেশ দিই। তারপর নামাযের জন্য আযান দেওয়ার আদেশ দিই। তারপর কোন লোককে লোকেদের ইমামতি করতে আদেশ দিই। তারপর আমি স্বয়ং সেই সব (পুরুষ) লোকদের কাছে যাই (যারা মসজিদে নামায পড়তে আসেনি)এবং তাঁদেরকে সহ তাদের ঘর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিই।”১৫৬
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রঃ) বলেন, “ যাকে এ কথা আনন্দ দেয় যে, সে কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌র সঙ্গে মুসলিম হয়ে সাক্ষাৎ করবে, তাঁর উচিৎ, সে যেন এই নামাযসমূহ আদায়ের প্রতি যত্ন রাখে, যেখানে তাঁর জন্য আযান দেওয়া হয় (অর্থাৎ মসজিদে)। কেননা, মহান আল্লাহ তোমাদের নবী (সঃ) এর নিমিত্তে হিদায়াতের পন্থা নির্ধারণ করেছেন। আর নিশ্চয় এই নামাযসমূহ হিদায়েতের অন্যতম পন্থা ও উপায়। যদি তোমরা (ফরয) নামায নিজেদের ঘরেই পর, যেমন এই পিছিয়ে থাকা লোক নিজ ঘরে নামায পড়ে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার করবে। আর (মনে রেখো) যদি তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার কর, তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা পথহারা হয়ে যাবে। আমি তোমাদের লোকেদের এই পরিস্থিতি দেখেছি যে, নামায (জামাতসহ পড়া) থেকে কেবল সেই মুনাফিক (কপট মুসলিম) পিছিয়ে থাকে, যে প্রকাশ্য মুনাফিক। আর (দেখেছি যে, পীড়িত)ব্যক্তিকে দুজনের (কাঁধের) উপর ভর দিয়ে নিয়ে এসে (নামাযের) সারিতে দাঁড় করানো হতো।” ১৫৭
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

পাতলা কাপড়ে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ কি?

যে কাপড় পড়া সত্ত্বেও পুরুষদের নাভির নিচে থেকে হাঁটু পর্যন্ত কোন অংশ খোলা থাকে অথবা আবছা দেখা যায়, সে কাপড়ে নামায শুদ্ধ হয় না। অনুরূপ যে শাড়ি বা ওড়নায় মহিলার মাথার চুল, ঘাড়, হাতের রলা, পেট বা পিঠের অংশ খোলা থাকে অথবা আবছা দেখা যায়, তাতে নামায হয় না। নামাযে সতর ঢাকা জরুরী। তা খোলা গেলে নামায ঘোলা হয়ে যাবে।
----
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

পাতলা শাড়ি বা ওড়না পড়ে মেয়েদের নামায কি শুদ্ধ হবে?

যে লেবাস পরার পরেও ভিতরের চামড়া ও চুল নজরে আসে, সে লেবাস পরে নামায শুদ্ধ হবে না। ১৫৮
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

কাঁচা পিঁয়াজ রসুন খেয়ে কি নামায শুদ্ধ হয়?

রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি (কাঁচা) রসুন বা পিঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের নিকট থেকে দূরে অবস্থান করে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে।” ১৫৯
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, “যে ব্যক্তি (কাঁচা) পিঁয়াজ রসুন ও লীক পাতা খায়, সে যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কেননা, ফিরিশতাগণ সেই জিনিসে কষ্ট পান, যাতে আদম সন্তান কষ্ট পায়।”
কাঁচা পিঁয়াজ রসুন লীক পাতা নামাযের আগে খাওয়া উচিৎ নয়। খেতে বাধ্য হলে এবং মুখ এর গন্ধ দূরীভূত না করতে পারলে জামাআতে শামিল হওয়া বৈধ নয়। তবে একাকী ও জামা আতে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ হয়ে যায়। অনুরূপ বিড়ি সিগারেট খাওয়ার ফলে মুখ বা লেবাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।তা খাওয়া হারাম এবং তাঁর দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে বা জামাআতে আসাও অবৈধ। একই ভাবে যাঁদের গায়ে কোন প্রকারের দুর্গন্ধ আছে, তাদের জন্য জামাআতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ। সকলের জন্য জরুরী, সকল প্রকার দুর্গন্ধমুক্ত হয়ে জামাআতে উপস্থিত হওয়া। ১৬০
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

মহল্লা বা গ্রাম এর মসজিদ ছেড়ে অন্য মহল্লা বা গ্রাম এর মসজিদে জুমআহ বা তারাবীহ ইত্যাদি নামায পড়তে যাওয়া বৈধ কি? তাতে উদ্দেশ্য থাকে ভাল খতীবের ভাল বক্তব্য শোনা এবং সুমধুর কণ্ঠবিশিষ্ট ক্বারি ইমামের কুরআন শুনে উপকৃত হওয়া। সাইকেল বা গাড়িযোগে গেলে কি তা হাদিসে বর্ণিত নিষেধের আওতায় পড়ে, যাতে বলা হয়েছে, “তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফর করা যাবে না; মদিনা শরীফের মসজিদে নববী, মাসজিদুল হারাম (কা’বা শরীফ) ও মসজিদে আকসা (প্যালেষ্টাইনের জেরুজালেমের মসজিদ)।” ১৬১ (বুখারী ১৯৯৫, মুসলিম ১৩৯৭ নং)

না। উক্ত সফর নিষিদ্ধ সফরের পর্যায়ভুক্ত নয়। কারণ মসজিদের বরকতলাভের উদ্দেশ্যে সে সফর করা হয় না।বরং উক্ত সফর ইলম তলবের সফর হিসেবে পরিগণিত। আর ইলমে তলবের জন্য সফর নিষিদ্ধ নয়। সলফে সালেহীন ইলম তলবের জন্য দূর দূরান্তের পথ সফর করেছেন। আর মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন পথ অবলম্বন করে চলে, যাতে সে ইলম (শরয়ী জ্ঞান) অন্বেষণ করে, আল্লাহ তাঁর বিনিময়ে তাঁর জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করে দেন।” ১৬২
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

তারাবীহর নামাযের মাঝে মধ্যে পঠনীয় কোন নির্দিষ্ট দুআ বা দরূদ আছে কি?

তারাবীহর নামাযের দুই বা চার রাকাআত পড়ে অথবা সবশেষে পঠনীয় নির্দিষ্ট কোন দুআ দরূদ নেই। এ স্থলে নির্দিষ্ট কোন দুআ বা দরূদ সশব্দে বা নিঃশব্দে, একাকী বা সমবেত সুরে পড়লে বিদআত বলে পরিগণিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল-- যা তাঁর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” ১৬৩
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা বর্জনীয়।”
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

ফজরের আযানের পূর্বে মাইকে কুরআন, দুআ (বা গজল) পড়া, অনুরূপ জুমআর খুতবার পূর্বে ক্বারীর কুরআন পড়া (বা কারো বক্তৃতা করা) কি শরীয়তসম্মত?

না। এমন কাজ শরীয়তসম্মত নয়। কুরআন পড়া ভাল কাজ হলেও উক্ত সময়ে পড়া বিদআত হবে। কারণ, তাঁর কোন দলীল নেই। কাজ ভাল বলেই তা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সময়, পরিমাণ বা পদ্ধতির বাইরে তা করলে বিদআত হয়। পক্ষান্তরে কাজ খারাপ হলে তো তাকে ‘হারাম’ বলা হয়। পড়ন্ত বিদআতের ‘ভাল-মন্দ’ (হাসানাহ-সাইয়িআহ) বলে কোন প্রকার নেই। যেহেতু ‘কুল্লু বিদআতিন য্বালালাহ’। অর্থাৎ প্রত্যেকটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। ১৬৪
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

জামাআত চলাকালে ইমাম রুকূ অবস্থায় থাকলে অনেক নামাযী বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে রুকুতে দেরি করতে বলে। যাতে সে রুকু বা রাকআত পেয়ে যায়। কেউ দৌড়ে আসে, কেউ সজোরে পদক্ষেপ করে, কেউ গলা-সাড়া দেয়, কেউ ‘ইন্নাল্লাহা মা’আস স্বাবেরীন’ বলে। শরীয়তের দৃস্টিতে এমন কাজ বৈধ কি?

তাদের এমন কাজ বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেন, “নামাযের ইকামত হয়ে গেলে তোমরা দৌড়ে এসো না। বরং তোমরা স্বাভাবিকভাবে চলে এসো। আর তোমাদের মাঝে যেন স্থিরতা থাকে। অতঃপর যেটুকু নামায পাও, তা পড়ে নাও এবং যা ছুটে যায়, তা পুরা করে নাও।” ১৬৫
আভাষে-ইঙ্গিতে ইমামকে অপেক্ষা করতে বলায় রয়েছে বেআদবি। তাতে সকল নামাযীর ডিস্টার্ব হয় এবং তাদের মনোযোগ ও বিনয় বিনষ্ট হয়ে যায়। ১৬৬
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

রুকু অবস্থায় কারো আসা বুঝতে পারলে ইমামের জন্য রুকু লম্বা করা কি বিধেয়?

এতটুকু সময় অপেক্ষা করা বৈধ, যাতে নামাযরত নামাযীদের মনে বিরক্তি না আসে। কারণ বাইরে থেকে আগন্তক ব্যক্তি অপেক্ষা তাদের অবস্থার খেয়াল রাখা অধিক জরুরী। বিশেষ করে শেষ রাকাআতে রুকু পাইয়ে দেওয়ায় লাভ এই হয় যে, তাঁর নামায ও জামাআত পাওয়া হয়ে যায়। নবী (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাআত পেল, সে নামায পেয়ে গেল।” ১৬৭
অনুরূপ শেষ তাশাহহুদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কিঞ্চিৎ দেরি করায় দোষ নেই। ১৬৮
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

সূরা ফাতিহা না পড়লে যদি নামায না হয়, তাহলে রুকু পেলে রাকআত গণ্য হয় কীভাবে?

প্রত্যেক বিষয়ের ব্যাতিক্রম অবস্থা থাকে। রুকু পেলে রাকাআত গণ্য হওয়ার ব্যাপারটাও সেই রকম। কিয়াম নামাযের রুকন। কিন্তু অসুবিধার ক্ষেত্রে কিয়াম ছাড়া নামায হয়ে যায়। আবূ বাকরাহ (রাঃ) একদা মসজিদে প্রবেশ করতেই দেখলেন, নবী (সাঃ) রুকুতে চলে গেছেন। তিনি তারাহুড়ো করে কাতারে শামিল হওয়ার আগেই রুকু করলেন। অতঃপর রুকুর অবস্থায় চলতে চলতে কাতারে গিয়ে শামিল হলেন। এ কথা নবী (সঃ) কে বলা হলে তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে বললেন, “আল্লাহ তোমার আগ্রহ আর বৃদ্ধি করুক। আর তুমি দ্বিতীয় বার এমনটি করো না। (অথবা আর তুমি ছুটে এসো না। অথবা তুমি নামায ফিরিয়ে পড়ো না।)” ১৬৯
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

নামায ছুটে গেলে কাযা পড়ব কখন? আগামী ওয়াক্ত বা আগামী দিনের ঐ নামাযের সময় পর্যন্ত কি পিছিয়ে দেওয়া চলে?

আগামীতে যখনই সময় পাওয়া যাবে, তখনই তা পড়ে নিতে হবে। নিষিদ্ধ সময়েও তা পড়া যাবে। আগামী ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না। মহানবী (সঃ) বলেন, “নিদ্রা অবস্থায় কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তো জাগ্রত অবস্থায় হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তাঁর উচিৎ, স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া।” কেননা, আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামায কায়েম কর।” ১৭০
  নামায --আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী

নামায কাযা রেখে মারা গেলে অনেক হিসাব করে ছেড়ে দেওয়া নামাযের ‘কাফফারা’ আদায় করে, তা কি বিধেয়?

রোগী ব্যক্তির জন্য নামায মাফ নয়। যতক্ষণ জ্ঞান থাকে, ততক্ষণ তাকে নামায পড়তে হবে। ছুটে গেলে কাযা পড়ে নিতে হবে। এটাই তাঁর কাফফারা। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যখন কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তাঁর কাফফারা হল স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “(এই কাযা আদায় করা ছাড়া) এর জন্য আর অন্য কোন কাফফারা নেই।”
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে মারা গেছে, তাঁর তরফ থেকে চাল বা টাকার কাফফারা আদায় করলেও কোন কাজের নয়। কাজের নয় তাঁর নামে দান খয়রাত বা অন্য কোন ঈসালে সওয়াব করা।

                      page-     1      2       3