ফাসেক ইমামের পিছনে নামায কি শুদ্ধ?
ফাসেক হল সেই ব্যক্তি, যে অবৈধ, হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ করে এবং ফরয বা ওয়াজেব কাজ ত্যাগ করে; অর্থাৎ কবীরা গুনাহ করে। যেমন, ধূমপান করে, বিড়ি-সিগারেট খায়, জর্দা-তামাক প্রভৃতি মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে, গাঁটের নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে, অথবা সূদ বা ঘুস খায়, অথবা মিথ্যা বলে, অথবা (অবৈধ প্রেম) ব্যাভিচার করে, অথবা দাড়ি চাঁছে বা (এক মুঠির কম) ছেঁটে ফেলে, অথবা মুশারিকদের যবেহ (হালাল মনে না করে) খায়, (হালাল মনে করে খেলে তাঁর পিছনে নামায হবে না।) অথবা স্ত্রী কন্যাকে বেপর্দা রেখে তাঁদের ব্যাপারে ঈর্ষাহীন হয়, অথবা মা বাপকে দেখে না বা তাঁদেরকে ভাত দেয় না ইত্যাদি।
উক্ত সকল ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুরূপ অন্যান্য ব্যক্তির পিছনে নামায মাকরূহ (অপছন্দনীয়)। বিধায় তাকে ইমামরূপে নির্বাচন ও নিয়োগ করা বৈধ ও উচিৎ নয়। কিন্তু যদি কোন কারণে বা চাপে পরে বাধ্য হয়েই তাঁর পিছনে নামায পড়তেই হয়, তাহলে নামায হয়ে যাবে।২০৪
সাহাবাগণের যামানায় সাহাবাগণ ফাসেকের পিছনে নামায পরেছেন। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রঃ) হাজ্জাজ্জের পিছনে নামায পড়েছেন। ২০৫ আবূ সাঈদ খুদরী (রঃ) মারওআনের পিছনে নামায পড়েছেন। ২০৬
তৃতীয় খলীফা উসমান (রাঃ) ফিতনার সময় যখন স্বগৃহে অবরুদ্ধ ছিলেন, তখন উবাইদুল্লাহ বিন আদী বিন খিয়ার তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আপনি জনসাধারণের ইমাম। আর আপনার উপর যে বিপদ এসেছে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। ফিতনার ইমাম আমাদের নামাযের ইমামতি করছে; অথচ তাঁর পশ্চাতে নামায পড়তে আমারা দ্বিধাবোধ করি।’ তিনি বললেন, “ নামায হল মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। সুতরাং লোকে ভাল ব্যবহার করলে তাঁদের সাথেও ভাল ব্যবহার কর। আর মন্দ ব্যবহার করলে তাঁদের সাথে মন্দ ব্যবহার করা থেকে দূরে থাক।” ২০৭
উক্ত সকল ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুরূপ অন্যান্য ব্যক্তির পিছনে নামায মাকরূহ (অপছন্দনীয়)। বিধায় তাকে ইমামরূপে নির্বাচন ও নিয়োগ করা বৈধ ও উচিৎ নয়। কিন্তু যদি কোন কারণে বা চাপে পরে বাধ্য হয়েই তাঁর পিছনে নামায পড়তেই হয়, তাহলে নামায হয়ে যাবে।২০৪
সাহাবাগণের যামানায় সাহাবাগণ ফাসেকের পিছনে নামায পরেছেন। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রঃ) হাজ্জাজ্জের পিছনে নামায পড়েছেন। ২০৫ আবূ সাঈদ খুদরী (রঃ) মারওআনের পিছনে নামায পড়েছেন। ২০৬
তৃতীয় খলীফা উসমান (রাঃ) ফিতনার সময় যখন স্বগৃহে অবরুদ্ধ ছিলেন, তখন উবাইদুল্লাহ বিন আদী বিন খিয়ার তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আপনি জনসাধারণের ইমাম। আর আপনার উপর যে বিপদ এসেছে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। ফিতনার ইমাম আমাদের নামাযের ইমামতি করছে; অথচ তাঁর পশ্চাতে নামায পড়তে আমারা দ্বিধাবোধ করি।’ তিনি বললেন, “ নামায হল মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। সুতরাং লোকে ভাল ব্যবহার করলে তাঁদের সাথেও ভাল ব্যবহার কর। আর মন্দ ব্যবহার করলে তাঁদের সাথে মন্দ ব্যবহার করা থেকে দূরে থাক।” ২০৭
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ফজরের আযানের পূর্বে মাইকে কুরআন পাঠ করেন, কিছু দুআ-দরুদ পড়েন, তারপর আযান দেন, এটা কি শরীয়তসম্মত?
ফজরের আযানের পূর্বে মাইকে কুরআন পাঠ করা, কিছু দু'আ-দরূদ পড়া, তারপর আযান দেওয়া শরীয়তসম্মত নয়, বরং তা বিদআত। ২০৮
জুমআর দিন মিম্বরে চড়ে খতীবের খুতবা দেওয়ার পূর্বে একজন ক্বারি কুরআন তিলাওয়াত করে (অথবা বক্তৃতা করে) শোনায়। এটা কি শরীয়তসম্মত?
এ কাজের কোন দলীল আমাদের জানা নেই। আর মহানবী (সঃ) বলেনা, “যে ব্যক্তি আমাদের এ (দ্বীন) ব্যাপারে নতুন কিছু আবিষ্কার করে, সে ব্যক্তির সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।” ২০৯ (বুখারী ও মুসলিম) “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে,জার উপর আমাদের কোন নির্দেশ নেই, সে ব্যক্তির সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।” ২১০
আমাদের আদর্শ নবী মুহাম্মদ (সঃ)। তিনি মিম্বারে খুতবা দেওয়ার আগে নিচে দাঁড়িয়ে খুতবা দেন নি। তিনি উম্মতকে নির্দেশ করে বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমাআর দিন নাপাকির গোসলের ন্যায় গোসল করল এবং (সূর্য ঢলার সঙ্গে সঙ্গে) প্রথম অক্তে মসজিদে এল, সে যেন একটি উট দান করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময় এল, সে যেন একটি গাভী ডান করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় সময় এল, সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা দান করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে এল, সে যেন একটি মুরগী দান করল। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে এল, সে যেন একটি ডিম দান করল। তারপর ইমাম যখন খুতবাহ প্রদানের জন্য বের হন, তখন(লেখক) ফিরিশতাগণ যিকর শোনার জন্য হাজির হয়ে যায়।” ২১১ (বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আর বলেছেন, “যে কোন ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল ও সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করল, নিজেস্ব তেল গায়ে লাগায় অথবা নিজ ঘরের সুগন্ধি (আতর) ব্যবহার করে, অতঃপর (মসজিদে) গিয়ে দুজনের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি না করেই (যেখানে স্থান পায় বসে যায়)এবং তাঁর ভাগ্যে যত রাতাআত নামায জোটে, আদায় করে তারপর ইমাম খুতবাহ আরাম্ভ করলে নীরব থাকে, সে ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট জুমাআহ থেকে পরবর্তী জুমআহ পর্যন্ত কৃত সমুদয় (সাগীরা) গুনাহরাশিকে মাফ করে দেওয়া হয়।” ২১২ (বুখারী)
সুতরাং মসজিদে গিয়ে নামায পড়া কর্তব্য মুসল্লীদের। অতঃপর ইমাম খুতবা দিলে নীরব হয়ে বসে খুতবা শুনবে। সুতরাং তাঁর আগে আবার খুতবা শোনার অবসর কোথায়? মিম্বারে খুতবা শুরু হওয়ার আগে কেউ না কেউ আসতেই থাকবে। সুতরাং তাঁদেরকে নামায পড়তে না দিয়ে লেকচার শুনিয়ে ডিস্টার্ব করা কীভাবে বৈধ হতে পারে?
অথচ রাসুল (সঃ) সাহাবাগণকে সশব্দে কুরআন পড়তে নিষেধ করে বলেন, “তোমরা একে অপরকে কষ্ট দিয়ো না এবং একে অপরের উপর কিরাআতে শব্দ উঁচু করো না।” ২১৩ পরন্ত তিনি জুমাআর দিন নামাযের পূর্বে দার্সের জন্য হালকা বাঁধতে নিষেধও করেছেন। ২১৪
অথচ রাসুল (সঃ) সাহাবাগণকে সশব্দে কুরআন পড়তে নিষেধ করে বলেন, “তোমরা একে অপরকে কষ্ট দিয়ো না এবং একে অপরের উপর কিরাআতে শব্দ উঁচু করো না।” ২১৩ পরন্ত তিনি জুমাআর দিন নামাযের পূর্বে দার্সের জন্য হালকা বাঁধতে নিষেধও করেছেন। ২১৪
তাহলে জুমআর খুতবার পূর্বে নামাযের সময় অতিরিক্ত লেকচার কীভাবে বৈধ হতে পারে? আসলে স্থানীয় ভাষায় খুতবা ‘হারাম’ করে উক্ত ‘লেকচারের বিদআত’ আবিষ্কৃত হয়েছে।
অনেক নামাযী নামাযরত অবস্থায় নাক, দাড়ি বা কাপড় ইত্যাদি নিয়ে খেলা করে। এদের ব্যাপারে কিছু বলার আছে কি?
নামাযরত অবস্থায় নাক, দাড়ি ইত্যাদি নিয়ে উদাস হওয়া উচিৎ নয়। যেহেতু তা নামাযের একাগ্রতায় পরিপন্থী। আর মহান আল্লাহ বলেছেন, “অবশ্যই বিশ্বাসীগণ সফলকাম হয়েছে। যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র।”(মু’মিনূনঃ ১-২)
নামাযের শেষ তাশাহহুদে কি নিজের ভাষায় দুআ করা যায়?
অনেক উলামার মতে বৈধ নয়। যেহেতু নামায আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভাষায়, সুতরাং সেই ভাষাতেই দু'আ হওয়া উচিৎ। সে সব কুরাআনী ও হাদীসী দু'আ জানা আছে, তাই পড়া উচিৎ। যা জানা নেই, তা নামাযের বাইরে অন্য সময় নিজের ভাষায় করা উচিৎ। অনেকে ‘ইচ্ছামত দু'আ’ বলতে ‘ইচ্ছামত ভাষা’য় দু'আ বলেছেন। সুতরাং নিজের ভাষায় দু'আ করা যাবে। আমরা বলি, না করাই উচিৎ। যেহেতু ইবাদত প্রমাণ সাপেক্ষ। আর নবী (সঃ) এর বানী, “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ (শেষ) তাশাহহুদ সম্পন্ন করবে, তখন সে যেন আল্লাহ্র নিকট চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। এরপর সে ইচ্ছামতো দু'আ করবে।” এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “বর্ণিত ও বিদিত দু'আ করবে।” যেহেতু নিজের ভাষায় দু'আ হল সাধারণ মানুষের কথা। আর তা নামাযে বলা বৈধ নয়। ২১৬
সিজদায় কি কুরআনী দু’আ করা যায়?
সিজদায় কুরআনের আয়াত পড়া নিষেধ। কিন্তু মুনাজাতের দু’আ হিসেবে পড়লে তাতে দোষ নেই। ২১৭ ‘আমাকে সিজদায় কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে’ যেমনি আম, তেমনি ‘তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দু’আ কর’ নির্দেশও আম। তাতে কুরআনী ও হাদিসী সব রকম দু’আই করা যাবে। যারকাশী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “সিজদায় কুরআন পড়া মাকরূহ তখন, যখন কিরাআতের উদ্দেশ্যে তা পড়া হবে। পক্ষান্তরে তা যদি দু’আ অথবা (আল্লাহ্র) প্রশংসা হিসেবে পড়া হয়, তাহলে তা কুরআনী আয়াত দিয়ে কুনূত পড়ার মত হওয়া উচিৎ।”২১৮
কর্মক্ষেত্রে পানি নেই। বাসায় পানি আছে। নামাযের ওয়াক্ত যাওয়ার আগে বাসায় পৌঁছে যাবে। নামাযের সময় হলে তায়াম্মুম করে আওয়াল ওয়াক্তে নামায পরে নেবে, নাকি বাসায় ফিরে শেষ ওয়াক্তে উযূ করে নামায পড়ব?
সময় পার হওয়ার আশংকা থাকলে এবং তাঁর আগে পানি না পাওয়ার কথা নিশ্চিত হলে তায়াম্মুম করে আওয়াল অক্তেই নামায পড়ে নেবেন। পক্ষান্তরে বাসায় ফিরে ওয়াক্ত বাকি থাকার কথা নিশ্চিত হলে বাসায় ফিরে উযূ করেই নামায পড়বেন।