বর্তমানে তরুণ সমাজ যে হারে প্রেমের দিকে ঝুকেছে তার একটা অন্যতম কারণ হলো আবেগ, কৌতূহল। এই আবেগ, কৌতূহল কিভাবে সৃষ্টি হয়? এর কারণ হিসেবে ধরা যায় অপসংস্কৃতিকে। তরুণ সমাজ এখন মারাত্মক ভাবে বিভিন্ন অপসংস্কৃতি যেমন, হিন্দি,সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি, ওয়েব সিরিজ, নাটক, ইত্যাদির দিকে ঝুকে পড়েছে। আর এগুলোর একটা বড় অংশ জুড়ে দেখানো হয় কল্পিত প্রেম কাহিনী। আর এগুলো দেখার সময় তারাও নিজেকে ঐ স্থানে বসিয়ে কল্পনা করতে থাকে। আহ! আমি যদি ঐ নায়কের মতো হতাম? আসলেই জীবনে এমন একটা মেয়ে/ছেলে থাকার খুব দরকার। এভাবে হারাম প্রেমের কল্পিত দৃশ্যগুলো তাদের চোখের সামনে খেলা করতে থাকে। আস্তে আস্তে তারা ফ্যান্টাসিতে ভুগতে থাকে। একসময় মুভির/নাটকের কাহিনীকে বাস্তবে নিয়ে আসতে চায়।
.
এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছ যে, কেউ যদি বন্ধুমহলে গিয়ে বলে 'দোস্ত আমি এখনো সিঙ্গেল' তাহলে আর রক্ষা নাই। মানে সিঙ্গেল হওয়াটা এখন দোষের। ছেলেদের আড্ডার বেশিরভাগ জুড়ে থাকে এই প্রেম কিচ্ছা। কেউ সিঙ্গেল হলে তার নিজেকে অপদার্থ মনে হয়। যে ছেলেটাকে আমরা আতেল ডাকতাম সেও আজ ডাভল আর আমি কিনা এখনো সিঙ্গেল? যে করেই হোক একটা মেয়েকে পটাতেই হবে। প্রথমে ফেসবুক আইডি যোগাড়, তারপর চ্যাটিং শুরু, আস্তে আস্তে গভীরে প্রবেশ, অত:পর নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলা আর সব শেষে কোনো এক আবেগময় মুহূর্তে দিলের খবর প্রকাশ করে নৌকায় পাল তুলার মধ্য দিয়ে প্রেমের সাগরে পথচলা শুরু হয়।
.
প্রেমে পড়ার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আল্লাহ বিমুখতা। ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “(দেহ যেমন অলস হয়ে পড়ে থাকে) অন্তর কখনো অলস থাকে না। আমাদের নফস আমাদেরকে হয় ভালো নতুবা খারাপ কাজে ব্যস্ত রাখে।"
শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ (হাফে.) এর ব্যাখ্যা করে বলেন, “কারো অন্তরে যদি আল্লাহ্র প্রতি তীব্র ভালোবাসা না থাকে, তবে সে অন্তর স্বাভাবিকভাবেই অন্য কারো প্রতি ভালোবাসা দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়। আমাদের নফস কখনো অলস থাকে না। আমরা যদি একে আল্লাহ্র আনুগত্যে ব্যস্ত না রাখি, তবে তা আমাদের আল্লাহ্র অবাধ্যতায় ব্যস্ত রাখবে।”
.
আপনি যখন আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন তখন আপনার অন্তর অন্য কারো দিকে ঝুকে পড়তে চাইবে। এর কারণ কি? কারণ হলো এই সময় শয়তান আমাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসে। আর আল্লাহ এটা কুর'আনে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, 'যে ব্যক্তি রহমানের স্মরণ থেকে গাফিল থাকে আমি তার উপর এক শয়তান চাপিয়ে দেই, সে তার বন্ধু হয়ে যায়।' [সূরা যূখরুফ: ৩৬]
.
স্বভাবতই শয়তানের পাল্লায় পড়ে আমরা এই সময় নারীর দিকে ঝুকে পড়ি। কিন্তু নারীই কেন? শয়তানের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে, “নারীরা হচ্ছে আমার অব্যর্থ তীর।” তাই সে নারীর মাধ্যমে আমাদের বিপথগামী করতে চায়। হঠাৎ ঝলকে, চোখের পলকে আমরা কোনো রমণীর প্রেমে পড়ে যাই। একই ঘটনা ঘটে বোনদের ক্ষেত্রেও। প্রমের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে আমরা অপূর্ণ নফসকে পূর্ণ করে নেই। যেই জায়গাটা বরাদ্ধ থাকার কথা ছিলো শুধু আমার রবের জন্য সেই জায়গায় এনে বসাই এক বেগানা নারী/পুরুষকে। যে নফস শুধু আমার রবের ডাকে সাড়া দেয়ার কথা ছিলো সে নফস এখন রবের কথা ভুলে গিয়ে অন্যের ডাকে সাড়া দিতে ব্যস্ত।
.
অনেকেই বলেন, ভাই আমার মনের কথাগুলো বলার জন্য একটা মানুষকে তো চাই। যে আমার কষ্টগুলো শুনবে আর আমার মনকে হালকা করবে। যার সাথে আমি আমার আনন্দগুলো ভাগ করতে পারবো এমন কাউকে তো খুব দরকার। আমি বলি, তাহলে ভাই আপনি আল্লাহকে আপনার বন্ধু বানিয়ে নিন না? আপনার মনের কথাগুলো তার সাথেই শেয়ার করেন। ওয়াল্লাহি, আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুতো তিনিই। আল্লাহ বলেন, 'আমি তার ঘাড়ের রগের চেয়েও বেশি কাছে আছি।' [সূরা ক্বাফ: ১৬]
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
লেখাঃ নাবিল হাসান (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)