দুনিয়া হল লড়াইয়ের ময়দান। প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় নিজের প্রবৃত্তির কাছে,নিজের...

দুনিয়া হল লড়াইয়ের ময়দান। প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় নিজের প্রবৃত্তির কাছে,নিজের চাওয়া গুলো অপূর্ণ রেখে, না পাওয়া গুলোকে মানিয়ে নিয়ে।দুঃখ, কষ্ট,হারানোর ব্যাথা,না পাওয়ার যন্ত্রণা প্রতিটি মুহূর্তে কুড়েকুড়ে খায় আমাদের হৃদয়কে। তারপরও বাচতে হয়। নিজের প্রিয়জনের জন্য কিংবা পরিবার পরিজনের জন্য।

এই ময়দানে বিপদ ও শোকের আকস্মিকতা এমন এক ভয়াবহ ব্যাপার যা অন্তরাত্মাকে প্রকম্পিত করে । মানুষের হৃদয়কে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়,বেচে থাকার ইচ্ছে আকর্ষণ সব বিনষ্ট করে দেয়। তবে শোকাগজাতের শুরুতেই যারা ধৈর্যধারণ করতে পারে তাদের জন্য এই কষ্টের তীব্রতা কমে যায়। মনের অপ্রসন্নতা কেটে যায়,অস্থিরতা দূর হয়।

দেখুন বিপদে ইন্নালিল্লাহ বলার উপকারিতা, সহিহ মুসলিম এ উম্মু সালামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বর্ননা করেন,

কোন মুসলিম যখন কোন বিপদে পতিত হয়,তখন সে যদি আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন" বলে এবং এ দুয়া পাঠ করে, হে আল্লাহ আমাকে বিপদে ধৈর্য ধারণের সওয়াব দান করুন এবং এর উত্তম বিকল্প দান করুন। তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে উত্তম বিকল্প দিয়ে ধন্য করে।
আমার স্বামী, আবু সালামার মৃত্যুর পরে আমি মনে মনে বললাম, আবু সালামার চেয়ে উত্তম কাউকে পাওয়া আদৌও কি সম্ভব?
তার পরিবারই প্রথম আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হিজরত করেছিলেন। তবুও আমি আশায় বুক বেধে উপর্যুক্ত দুয়াটি করতে থাকি।ফলে আল্লাহ তায়ালা আমাকে তার বিকল্প হিসেবে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দান করেছেন।

উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আমার নিকট হাতিম ইবনে আবি বালতায়াকে দিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ের পয়গাম পাঠালেন।
আমি বললাম আমার একটা মেয়ে আছে।আর আমি একটু অভিমানী।

তিনি বললেন, তোমার মেয়ের জন্য আমি দোয়া করছি,যেন আল্লাহ তার সুব্যবস্থা করে দেন এবং এই দোয়া করছি, তিনি যেন তোমার অভিমান দূর করে দেন।

- সহিহ মুসলিম : ৯১৮।

একটু লক্ষ করুন,ধৈর্যধারণ করা,ইন্নালিল্লাহ পড়া, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা এবং আল্লাহর প্রতি খুশি রাজি থাকার ফলাফল কী হয়েছে!. সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষকে উম্মে সালামার জীবন সঙ্গী বানিয়ে দিয়েছেন।

আবু মুসা আল আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- কারও সন্তান মারা গেলে আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানের রুহ নিয়ে এসেছো?
তারা বলে হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করে তোমরা আমার বান্দার
কলিজার টুকরোকে কেড়ে এনেছ? তারা বলে হ্যাঁ। 'আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলে, "সে" আলহামদুলিল্লাহ ও ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইয়ালাইহি রজিউন " বলেছে।।

আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটা বাড়ি বানিয়ে দাও। আর বাড়িটির নাম দাও "বাইতুল হামদ" বা প্রশংসাগৃহ।

- জামি তিরমিজী ১০২১।

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্নিত রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন আমি যখন কোন বান্দার প্রিয়জনকে তুলে নিই (আর সে পূণ্যের আশায় ধৈর্যধারণ করে) প্রতিদান হিসেবে আমি তার জন্য জান্নাত প্রস্তুত করে রাখি।

- সহীহ বুখারী ৬৪২৪।

উপরিউক্ত হাদিস গুলো আবার খেয়াল করুন। বিপদ আমার ব্যক্তিগত? ধৈর্য ধারন করলে আমার লাভ কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার বিনিময়ে কত উত্তম প্রতিদান রেখেছেন? আল্লাহ চাচ্ছেন, বান্দার কাঙ্খিত জিনিসটার চাইতে আরও উত্তম কিছু দান করতে।

সর্বোপরি মহান মালিকের কাছে ফরিয়াদ আমাদের হারানোর শূন্যতা গুলো তার চাইতে উত্তম কিছু দিয়ে পূর্ন করে দিন।  -আমিন।
-------------------------------------------------------------
                            --Copied- t.p.of.R